টোমাস স্টার্নস এলিয়ট (Thomas Stearns Eliot, OM) ছিলেন একজন কবি, প্রবন্ধকার এবং নাট্যকার। ইংরেজি-ভাষার আধুনিকতাবাদী কবিতার (Modernist poetry) অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি ভাষা, লেখনশৈলী এবং ছন্দের মাধ্যমে কবিতার শিল্পকে নতুনভাবে প্রাণবন্ত করে তোলেন। এলিয়ট তাঁর সমালোচনামূলক প্রবন্ধগুলোর জন্যও বিখ্যাত, যেখানে তিনি প্রায়ই দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত সাংস্কৃতিক ধারণাগুলোর নতুন মূল্যায়ন করেছেন।
জন্ম: ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮৮৮, সেন্ট লুইস, মিসৌরি, যুক্তরাষ্ট্র
মৃত্যু: ৪ জানুয়ারি ১৯৬৫ (বয়স ৭৬), লন্ডন, যুক্তরাজ্য
প্রভাবিত হয়েছেন: এজরা পাউন্ড, ম্যাথিউ আর্নল্ড, ইমানুয়েল কান্ট ইত্যাদি
Complete Title: Tradition and the Individual Talent.
Date of Composition: 1919.
Place Written: London.
First Published: 1919.
Literary Period: Modernist Period.
Genre: Non-fiction essay, Literary criticism.
Narrative Perspective: Written in the first-person, where Eliot presents his views on the role of tradition and the individual artist.
টি. এস. এলিয়ট ছিলেন অত্যন্ত কর্মশীল এক লেখক, যখন আধুনিকতাবাদী সাহিত্য আন্দোলন (Modernist literary period) মাত্র শুরু হয়েছিল।আধুনিকতাবাদ নতুন ও উদ্ভাবনী লেখনীর কাঠামো প্রতিফলিত করেছিল—যেমন ফ্রি ভার্স (ছন্দমুক্ত কবিতা) এবং স্ট্রিম-অফ-কনশাসনেস (চেতনার প্রবাহ)—যা যুদ্ধ-পরবর্তী বিশৃঙ্খল সময়ের সঙ্গে মানানসই ছিল।এদিকে, সাহিত্য সমালোচনার ক্ষেত্রে "নিউ ক্রিটিসিজম" (New Criticism) নামে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি জনপ্রিয়তা লাভ করে।
নিউ ক্রিটিসিজমের আগে, সাহিত্যকর্ম সাধারণত লেখকের ব্যক্তিগত জীবন ও তার সমসাময়িক ঘটনাবলির আলোকে বিশ্লেষণ করা হতো। কিন্তু নিউ ক্রিটিসিজম প্রস্তাব করে যে, সাহিত্যের ব্যাখ্যা লেখকের জীবনের প্রেক্ষাপট থেকে আলাদা করে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে করা উচিত।
এলিয়টের "Tradition and the Individual Talent" এই মতাদর্শ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তিনি বলেন, "কবিতা একটি নিঃস্বার্থ ও বস্তুনিষ্ঠ চর্চা হওয়া উচিত"।
এলিয়টের ভাষায়, "শিল্পকে বিজ্ঞানের অবস্থানের কাছাকাছি বলে বিবেচনা করা যেতে পারে," যা তার সময়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল এবং প্রচুর বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিল।
এলিয়ট ব্যাখ্যা করেন যে, "ঐতিহ্যগত" (traditional) শব্দটি সাধারণত লেখালেখির প্রসঙ্গে খুব একটা আলোচিত হয় না, বিশেষত প্রশংসাসূচক অর্থে নয়। বরং, অনেক সময় এটি একটি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। কারণ, পাঠক সাধারণত প্রথমে খোঁজে কীভাবে একজন লেখক তাঁর পূর্বসূরিদের থেকে আলাদা হয়ে উঠেছেন এবং তারপরেই তাঁর কাজকে মূল্যায়ন করে। কিন্তু এলিয়ট এই পূর্বধারণাকে (prejudice) দূর করতে চান, যেখানে তিনি যুক্তি দেন যে, একটি কবিতার সেরা অংশগুলো আসলে সেই অংশ, যেগুলো অতীতের সঙ্গে জীবন্তভাবে যুক্ত।
তবে, "ঐতিহ্য অনুসরণ" করার অর্থ এই নয় যে একজন কবিকে কেবলমাত্র তাঁর সাম্প্রতিক পূর্বসূরিদের অনুকরণ করতে হবে। বরং, এলিয়ট ব্যাখ্যা করেন যে, একজন প্রকৃত ঐতিহ্যবাহী কবির মধ্যে একটি "ঐতিহাসিক চেতনা" (historical sense) থাকতে হবে, যা তাকে পুরো অতীত সম্পর্কে সচেতন করে তোলে যেন তা বর্তমানে বিদ্যমান।
এলিয়ট আরও বলেন, সাহিত্যের জগতে সমস্ত কবিতা একটি সামগ্রিক ও একত্রিত সত্তা গঠন করে, যেখানে নতুন কবিতা পুরোনো কবিতাকে প্রভাবিত করে এবং পুরোনো কবিতা নতুন কবিতাকে পথ দেখায়। তিনি দাবি করেন, একজন সমালোচক কখনোই সমসাময়িক কবিতাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারবেন না, যদি না তিনি সেটিকে অতীত কবিতার সঙ্গে মিলিয়ে বিচার করেন। অতীত ও বর্তমান কবিতাগুলো পরস্পরকে মূল্যায়ন করে—নতুন কবিতা পুরোনোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয় এবং পুরোনো কবিতা নতুনের সংযোজনের মাধ্যমে নিজেকে প্রসারিত করে।
এলিয়ট বলেন যে ঐতিহ্যবাহী কবি সময়ের সম্পূর্ণ প্রবাহ সম্পর্কে সচেতন থাকেন, যা সর্বদা বিকশিত হয় কিন্তু কখনও কিছু পরিত্যাগ করে না বা উন্নত হয় না। শিল্প কখনও উন্নত হয় না, এটি কেবল বিকশিত হয়। বর্তমান কেবল অতীতের থেকে এই অর্থে ভিন্ন যে এটি অতীতকে এমনভাবে বোঝে যেভাবে অতীত নিজেকে বুঝতে পারে না। অপরিণত কবি এটি বুঝতে পারবেন না।
এরপর, এলিয়ট কিছু আপত্তির জবাব দেন, যেখানে বলা হয় যে তার কবিতার দৃষ্টিভঙ্গি খুব বেশি শেখার উপর নির্ভরশীল, যা একজন কবির স্বতঃস্ফূর্ততা ও অন্তর্দৃষ্টির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এলিয়ট ব্যাখ্যা করেন যে একজন কবি কতটুকু উপাদান ব্যবহার করে জ্ঞান অর্জন করেন তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ হলো কবি সারাজীবন ধরে অতীত সম্পর্কে একটি চেতনা গড়ে তোলেন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, কবি ক্রমাগত তার কাজের বৃহত্তর মূল্যবোধের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেন।
এলিয়ট তার প্রবন্ধের দ্বিতীয় অংশের সূচনায় বলেন যে প্রকৃত সমালোচনা কবিকে নয়, কবিতাকে বিশ্লেষণ করে। একজন কবি যত বেশি ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, তার কারণে তিনি গুণী হয়ে ওঠেন না; বরং তিনি কতটা নিখুঁত মাধ্যম হয়ে নতুনভাবে অনুভূতিগুলো একত্রিত করতে পারেন, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। এটি সেই অবস্থার মতো যেখানে একটি প্লাটিনাম টুকরা সালফার ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেনকে সালফিউরাস অ্যাসিডে রূপান্তরিত করে, অথচ নিজে কোনোভাবে এই প্রতিক্রিয়ার অংশ হয় না বা পরিবর্তিত হয় না।
এটি বোঝানোর জন্য, এলিয়ট যুক্তি দেন যে শিল্পের অভিজ্ঞতা অন্য যেকোনো অভিজ্ঞতার থেকে আলাদা। শৈল্পিক আবেগ জটিল হয়, কিন্তু ব্যক্তিগত আবেগ তেমন নাও হতে পারে। কবিরা নতুন অনুভূতি সৃষ্টি করেন বিভিন্ন বিশদ উপাদানের জটিল সংমিশ্রণের মাধ্যমে, এবং এর প্রভাব সর্বদা তীব্র হয়, যদিও আবেগগুলো ভিন্ন হতে পারে। এলিয়ট দাবি করেন যে একজন কবি যা প্রকাশ করেন, তা তার ব্যক্তিত্ব নয়, বরং সেই "মাধ্যম" যার মধ্যে এই সংমিশ্রণ ঘটে। তিনি দেখান যে একটি অংশের সামগ্রিক সুর (tone) কেবলমাত্র তার উৎসের পরিস্থিতির ফল নয়; বরং এটি নতুনভাবে অনুভূতিগুলোর সংমিশ্রণের মাধ্যমে গঠিত হয়।
সবশেষে, এলিয়ট বলেন যে একজন কবির ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তাকে অসাধারণ করে তোলে না। প্রকৃতপক্ষে, কবির জীবন একঘেয়ে হলেও তিনি ভালো কবি হতে পারেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, নতুন অভিজ্ঞতার সন্ধান করা কবিকে তার কবিতা সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করে না, কারণ শৈল্পিক আবেগ ব্যক্তিগত আবেগের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। কবিতা হলো আবেগ ও ব্যক্তিত্বের প্রকাশ নয়; বরং তা উভয়ের থেকেই একটি পরিত্রাণ।
সংক্ষেপে, এলিয়ট তার সিদ্ধান্ত উৎসর্গ করেন যেকোনো ব্যক্তি, যিনি সত্যিকারের কবিতায় আগ্রহী। একজন কবির কাজ অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে, এবং এই নিরপেক্ষতায় (depersonalization) পৌঁছাতে হলে কবিকে এমনভাবে অতীত সম্পর্কে চেতনা গড়ে তুলতে হবে যেন তা বর্তমানের মতো জীবন্ত।