Samuel Taylor Coleridge was an English poet, literary critic, philosopher, and theologian who played a significant role in founding the Romantic Movement in England. He was also a member of the Lake Poets, alongside his friend William Wordsworth. Additionally, he collaborated and shared volumes with Charles Lamb, Robert Southey, and Charles Lloyd.
Born: October 21, 1772, Ottery St Mary, United Kingdom
Died: July 25, 1834 (aged 61), Highgate, London, United Kingdom
Influenced by: William Shakespeare, John Milton, Immanuel Kant
"The Rime of the Ancient Mariner" Introduction
কোলরিজ ছিলেন রোমান্টিক আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, যা উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বিকাশ লাভ করে। এই আন্দোলন আলোকিত যুগের (Age of Enlightenment) প্রতিক্রিয়ায় গড়ে ওঠে—যেখানে ১৮শ শতাব্দীর চিন্তাবিদরা যুক্তিকে (reason) সর্বোচ্চ বলে মনে করতেন।
কোলরিজ সেই সময় লেখালেখি করছিলেন, যখন শিল্প বিপ্লব (Industrial Revolution) শুরু হয়েছিল। এই নতুন প্রযুক্তিগত পরিবর্তন মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যকার ভারসাম্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠছিল। রোমান্টিক কবিরা যুক্তির চেয়ে আবেগকে বেশি মূল্য দিতেন এবং প্রকৃতির মহিমা ও সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দিতেন।
এই কবিতাটি নির্দিষ্ট কোনো সময়কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তবে এতে রোমান্টিক ভাবধারার গভীর প্রভাব রয়েছে। এটি প্রাথমিক অভিযাত্রীদের (early explorers) অভিজ্ঞতা এবং তৎকালীন আবিষ্কার ও সমুদ্রযাত্রার বিবরণ থেকে অনুপ্রাণিত। যখন আবিষ্কারের যুগ (Age of Discovery) শেষের দিকে, তখনও বিশ্বজুড়ে নৌ অভিযান চলছিল, বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর (North and South Poles) দিকে নতুন অভিযান পরিচালিত হচ্ছিল। কারণ জাহাজ চলাচল আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়ে উঠেছিল।
"The Rime of the Ancient Mariner" Summary
কবিতাটি প্রাচীন নাবিকের (Ancient Mariner) পরিচয় দিয়ে শুরু হয়। তার "ঝলমলে চোখ" (glittering eye) দিয়ে সে একজন বিয়ের অতিথিকে (Wedding Guest) থামিয়ে দেয় এবং কাছাকাছি একটি বিবাহ উৎসবে যাওয়ার পথ থেকে সরিয়ে আনে। নাবিক তরুণ অতিথিকে একটি জাহাজের গল্প বলার জন্য আটকে রাখে—কোনো ভূমিকা না দিয়েই সে তার কাহিনি বলা শুরু করে। যদিও বিয়ের অতিথি তার পথ ধরে এগিয়ে যেতে চায়, তবুও নাবিক তাকে আটকে রেখে তার গল্প বলে যেতে থাকে।
নাবিকের গল্পে বলা হয়, জাহাজটি বন্দরের নিরাপদ জায়গা থেকে ছেড়ে দক্ষিণের দিকে যাত্রা করে। এরপর একটি ভয়ংকর ঝড় (tremendous storm) তাদের পথভ্রষ্ট করে দক্ষিণ মেরুর (South Pole) দিকে ঠেলে দেয়। সেখানে গিয়ে নাবিকরা বিস্মিত হয়ে দেখে চারপাশ কুয়াশা, বরফ, প্রচণ্ড শীত এবং বিশাল হিমবাহে (giant glaciers) ভরা।
এই প্রাণহীন বরফে ঢাকা পরিবেশের মধ্যে একটি অ্যালবাট্রস (Albatross) পাখির আবির্ভাব ঘটে। এটি যেন শূন্য ও নিষ্প্রাণ অ্যান্টার্কটিকার (Antarctica) নীরবতা ভেঙে দেয়। নাবিকরা এটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক (good omen) হিসেবে স্বাগত জানায়। অ্যালবাট্রস আসার পরপরই একটি নতুন বাতাস বইতে শুরু করে, যা জাহাজটিকে গতিশীল করে তোলে।
প্রতিদিন অ্যালবাট্রসটি ফিরে আসে, নাবিকরা সকালে ডাক দিলে সে হাজির হয় এবং জাহাজের পেছনে উড়ে বেড়ায়। কিন্তু একদিন, অজানা কারণে, নাবিক তার তীর-ধনুক দিয়ে পাখিটিকে হত্যা করে ফেলে। অন্য নাবিকরা হতবাক হয়ে চিৎকার করে ওঠে—কিন্তু কেন সে এটা করল, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই।
প্রথমে, অন্য নাবিকরা মারিনারের ওপর প্রচণ্ড রেগে যায়, কারণ তারা বিশ্বাস করেছিল যে অ্যালবাট্রস ছিল সৌভাগ্যের প্রতীক, যা বাতাস প্রবাহিত করে জাহাজকে এগিয়ে নিচ্ছিল। তবে, অ্যালবাট্রস মারা যাওয়ার পর যখন কুয়াশা পরিষ্কার হয়ে যায় এবং হাওয়া বইতে থাকে, তখন নাবিকরা বিশ্বাস করতে শুরু করে যে পাখিটিই ছিল কুয়াশার কারণ এবং তার মৃত্যুই প্রকৃতপক্ষে তাদের জন্য মঙ্গলজনক ছিল।
কিন্তু এরপরই বাতাস বইতে বন্ধ হয়ে যায়, এবং জাহাজটি একটি বিশাল, স্থির সমুদ্রে আটকে পড়ে। ধীরে ধীরে, নাবিকরা এবং মারিনার চরম তৃষ্ণায় ভুগতে থাকে। তাদের মধ্যে কিছু স্বপ্ন দেখে যে দক্ষিণ মেরু থেকে এক ক্ষুব্ধ আত্মা (Spirit) তাদের পিছু নিয়েছে। এই সময়, নাবিকরা অ্যালবাট্রসের মৃতদেহটি মারিনারের গলায় ঝুলিয়ে দেয়, যেন এটি তার শাস্তির প্রতীক হয়ে থাকে।
এমন ভয়ংকর স্থবিরতার মধ্যে, যেখানে চারপাশে শুধুই জল অথচ এক ফোঁটা পান করাও সম্ভব নয়, নাবিকরা এতটাই তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে যে তারা কথা বলতেও পারে না। এই অবস্থায়, মারিনার একটি জাহাজকে আসতে দেখলে, সে নিজেই নিজের বাহু কামড়ে রক্ত পান করে, যাতে সে চিৎকার করে অন্যদের জানাতে পারে। নাবিকরা আনন্দে হাসতে থাকে। কিন্তু এই আনন্দ ম্লান হয়ে যায় যখন তারা দেখে যে আসন্ন জাহাজটি ভূতুড়ে—এটি বাতাস ছাড়াই এগিয়ে আসছে।
জাহাজটির ডেকে মৃত্যু (Death) এবং জীবন্ত-মৃত্যু (Life-in-Death) নামে দুটি অতিপ্রাকৃত সত্তা পাশা খেলছে। তারা মারিনার এবং নাবিকদের জীবন নিয়ে বাজি ধরে। Life-in-Death মারিনারের আত্মা জিতে নেয়, যার ফলে সব নাবিক একে একে মারা যায়, কিন্তু মারিনার বেঁচে থাকে। নাবিকদের মৃতদেহ পড়ে থাকে, আর তাদের চোখ অনবরত মারিনারের দিকে তাকিয়ে থাকে, যেন তাকে অভিশাপ দিচ্ছে।
চারপাশে শুধু মৃতদেহ আর অভিশপ্ত দৃষ্টির মধ্যে মারিনার প্রার্থনা করতে চায়, কিন্তু পারে না। কিন্তু চাঁদের আলোতে, যখন সে জাহাজের পাশে সাঁতার কাটতে থাকা কিছু অপূর্ব সুন্দর জলসাপ (Water Snakes) দেখে, তখন তার মনে আধ্যাত্মিক উপলব্ধি আসে। সে বুঝতে পারে যে ঈশ্বরের সমস্ত সৃষ্টিই সুন্দর এবং তাদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা দেখানো উচিত। এই উপলব্ধি আসার সাথে সাথে সে প্রার্থনা করতে পারে, এবং অ্যালবাট্রসের মৃতদেহ তার গলা থেকে খুলে পড়ে সমুদ্রে ডুবে যায়।
এরপর মারিনার এক ধরনের ঘোরের মধ্যে চলে যায়, এবং যখন সে জাগে, দেখে যে মৃত নাবিকদের দেহে ফের প্রাণ এসেছে—তবে এবার তারা দেবদূতদের দ্বারা চালিত। এক অদৃশ্য শক্তি (Spirit) দক্ষিণ মেরু থেকে জাহাজটিকে দ্রুত বাড়ির পথে নিয়ে যেতে থাকে। গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছে মৃত নাবিকদের আত্মারা তাদের দেহ ছেড়ে উঠে যায়, এবং একটি ছোট নৌকায় এক সাধু (Hermit), এক নাবিক (Pilot), এবং তার ছেলে (Pilot’s Boy) জাহাজের দিকে এগিয়ে আসে।
জাহাজটি হঠাৎ ডুবে যায়, কিন্তু মারিনার নাবিকের নৌকায় ভেসে উঠে বেঁচে যায়। যখন মারিনার কথা বলে, তখন নাবিক ও সাধু ভয় পেয়ে যায়। সাধু প্রার্থনা করতে থাকে, আর মারিনার তাকে নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার অনুরোধ জানায়। সাধু ক্রুশচিহ্ন আঁকে এবং বিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করে, "তুমি কী ধরনের মানুষ?"।
শেষে, মারিনার ব্যাখ্যা করে যে সে এক অদ্ভুত অভিশাপের শিকার—সে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায় এবং তাকে সবসময় তার গল্প বলতে হয়। যদি সে তার গল্প না বলে, তবে সে এক ধরণের যন্ত্রণায় ভুগতে থাকে। সে মানুষের মুখ দেখে বুঝতে পারে কারা তার গল্প শোনার জন্য নির্ধারিত।
মারিনার তার কাহিনির শেষ অংশে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়:
প্রার্থনাই জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট আনন্দ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সমস্ত সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাই প্রকৃত প্রার্থনা।
এই কথা বলার পর, সে আবার তার যাত্রা শুরু করে, আর বিয়ের অতিথি "একজন দুঃখী কিন্তু অধিকতর জ্ঞানী মানুষ" হয়ে ফিরে যায়।
"The Rime of the Ancient Mariner"Line By Line Translation
PART I
এটি এক প্রাচীন নাবিক।
এখানে 'ancient Mariner' বলতে বোঝানো হয়েছে একজন বৃদ্ধ নাবিককে, যিনি একজন পথচারীকে থামিয়ে গল্প বলতে চান।
এবং সে তিনজনের মধ্যে একজনকে থামাল।
তিনজন মানুষের একটি দল যাচ্ছিল, কিন্তু নাবিক তাদের মধ্যে একজনকে ধরে রাখলেন।
'তোমার লম্বা ধূসর দাড়ি আর চকচকে চোখ দেখে,
বিবাহ অতিথি নাবিকের চেহারা লক্ষ্য করে অবাক হয়; তার দাড়ি দীর্ঘ ও ধূসর, আর চোখ জ্বলজ্বল করছে।
এখন কেন তুমি আমায় থামালে?
অতিথি প্রশ্ন করছে, সে কেন তাকে আটকালো, কারণ সে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যাচ্ছে।
বরের দরজা খোলা হয়েছে বিশালভাবে,
এখানে বলা হচ্ছে, বরবধূর বিবাহের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে এবং সবকিছু প্রস্তুত।
আর আমি আত্মীয়দের মধ্যে একজন,
অতিথি জানাচ্ছে, সে পরিবারের একজন সদস্য, তাই তার উপস্থিতি জরুরি।
অতিথিরা উপস্থিত, ভোজ প্রস্তুত:
উৎসব শুরু হতে চলেছে, তাই অতিথির দেরি করা অনুচিত।
তুমি কি আনন্দের কোলাহল শুনতে পাচ্ছো?'
অতিথি বোঝাচ্ছে, সব আনন্দময় পরিবেশের মাঝে নাবিক তাকে কেন থামাচ্ছে?
সে তার শুকনো হাত দিয়ে তাকে ধরে রাখে,
নাবিকের হাত খুবই শুষ্ক ও দুর্বল, কিন্তু সে অতিথিকে শক্তভাবে ধরে রেখেছে।
'একটা জাহাজ ছিল,' বলল সে।
নাবিক তার গল্প শুরু করে জাহাজ সম্পর্কে বলা শুরু করল।
'ছেড়ে দাও! আমাকে ধরো না, ধূসর দাড়িওয়ালা পাগল!'
অতিথি বিরক্ত হয়ে বলল, যেন সে তাকে যেতে দেয়।
অবিলম্বে সে তার হাত নামিয়ে নিল।
নাবিক অতিথিকে ছেড়ে দিল, কিন্তু গল্প বলা বন্ধ করল না।
সে তার ঝলমলে চোখ দিয়ে তাকে ধরে রাখে—
নাবিক তার চেহারার গভীর দৃষ্টিতে অতিথিকে সম্মোহিত করে ফেলে।
বিবাহ-অতিথি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল,
অতিথি জোর করে চলে যেতে পারত, কিন্তু সে অবচেতনভাবে শুনতে থাকে।
আর তিন বছরের শিশুর মতো শোনে:
অতিথির মনোযোগ এখন শিশুর মতো, সে আগ্রহ নিয়ে শুনছে।
নাবিক তার ইচ্ছামতো কথা বলতে পারছে।
এখন অতিথি বাধ্য হয়ে তার গল্প শুনতে হবে।
বিবাহ-অতিথি একটি পাথরের উপর বসে পড়ল:
অতিথি বুঝতে পারে, সে এড়াতে পারবে না, তাই বসে পড়ে।
সে শুনতে বাধ্য, বিকল্প নেই;
নাবিকের গল্প এমনভাবে বলছে যে সে শোনা ছাড়া উপায় নেই।
আর তখন সেই বৃদ্ধ মানুষটি বলতে শুরু করল,
নাবিক তার গল্প চালিয়ে যায়।
উজ্জ্বল চোখের নাবিক।
নাবিকের চোখের উজ্জ্বলতা তার অভিজ্ঞতার পরিচয় দিচ্ছে।
জাহাজটি উল্লাসের সাথে বিদায় নেওয়ার সময়, বন্দর পরিষ্কার হয়ে গেল।
জাহাজ যখন যাত্রা শুরু করল, তখন সবাই আনন্দের সাথে বিদায় জানাল।
আমরা আনন্দের সাথে রওনা দিলাম।
নাবিক ও তার সঙ্গীরা খুশির সাথে যাত্রা করল।
গির্জার নিচে, পাহাড়ের নিচে,
তারা এমন এক পথে চলল, যেখানে তারা গির্জা ও পাহাড়কে পেছনে ফেলে গেল।
আলোঘরের চূড়ার নিচ দিয়ে।
বাতিঘরও ধীরে ধীরে দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেল।
সূর্য বাম দিকে উদিত হলো,
তাদের জাহাজ যখন দক্ষিণ দিকে চলছিল, তখন সূর্য পূর্ব দিকে উঠছিল।
সমুদ্রের মধ্য থেকে উঠল সে!
সূর্য যেন সমুদ্রের ভেতর থেকে উঠে আসছে।
এবং সে উজ্জ্বলভাবে আলো ছড়াল, এবং ডান দিকে
সূর্য আকাশে উজ্জ্বলভাবে উঠল এবং পরে ডান দিকে নামতে থাকল।
সমুদ্রের মাঝে ডুবে গেল।
সূর্য পশ্চিম দিকে অস্ত গেল, যা দিনের স্বাভাবিক প্রবাহ বোঝায়।
দিন দিন আরও উঁচুতে উঠতে লাগল,
সূর্য প্রতিদিন আরো উপরে উঠছে, যা তাদের সমুদ্রযাত্রার অগ্রগতি বোঝাচ্ছে।
যতক্ষণ না তা দুপুরবেলা মাস্তুলের ওপর এসে পড়ল—
দুপুরের সময় সূর্য ঠিক মাস্তুলের ওপর অবস্থান করল, যা বোঝায় তারা নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে এগোচ্ছে।
এখানে বিবাহ-অতিথি তার বুকে হাত দিয়ে আঘাত করল,
অতিথি হতাশ বোধ করল, কারণ সে বুঝতে পারছে যে সে বিবাহ অনুষ্ঠান মিস করছে।
কারণ সে উঁচু স্বরে বাজানো বাসুনের শব্দ শুনল।
অতিথি বুঝতে পারল যে বিয়ের আনন্দময় পরিবেশ শুরু হয়ে গেছে।
বরবধূ হলঘরে প্রবেশ করল,
নববধূ এখন বিবাহ অনুষ্ঠানের কেন্দ্রে প্রবেশ করল।
সে গোলাপ ফুলের মতো লালাভ,
নববধূর মুখ লজ্জা বা উত্তেজনার কারণে লাল হয়ে উঠেছে।
তার সামনে মাথা নাড়িয়ে এগিয়ে যায়
তার সামনে আনন্দদায়ক বাদ্যযন্ত্রীরা সুর বাজাচ্ছে।
আনন্দময় সঙ্গীতজ্ঞ দল।
সুরকার ও বাদ্যযন্ত্রীরা সংগীত পরিবেশন করছে।
বিবাহ-অতিথি আবার তার বুকে হাত দিয়ে আঘাত করল,
অতিথি হতাশ হলো কারণ সে উৎসবে থাকতে পারছে না।
তবুও সে শুনতে বাধ্য, তার কোনো উপায় নেই;
সে যতই চেষ্টা করুক, নাবিকের গল্প শুনতেই হচ্ছে।
এবং তখন সেই বৃদ্ধ মানুষটি বলতে থাকল,
নাবিক তার কাহিনী অব্যাহত রাখল।
উজ্জ্বল চোখের নাবিক।
এই লাইন আবারও ইঙ্গিত দেয় যে নাবিকের চোখের মধ্যে কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে।
এবং এখন ঝড়ো বাতাস এল, এবং সে
হঠাৎ করে সমুদ্রযাত্রায় প্রবল ঝড় শুরু হলো।
ছিল অত্যাচারী ও প্রবল:
ঝড়ের শক্তি এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে জাহাজ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ল।
সে তার বিশাল ডানা দিয়ে আঘাত করল,
এখানে ঝড়কে এক বিশাল পাখির মতো বর্ণনা করা হয়েছে, যা জাহাজের ওপর আঘাত হানছে।
এবং আমাদের দক্ষিণ দিকে তাড়া করল।
ঝড় তাদের দক্ষিণ মেরুর দিকে ঠেলে নিয়ে গেল।
ঢালু মাস্তুল ও নিমজ্জিত নৌকামুখ নিয়ে,
ঝড়ের কারণে তাদের জাহাজের মাস্তুল বাঁকা হয়ে পড়েছে, এবং নৌকার সামনের অংশ পানির মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে।
যেন কেউ চিৎকার ও আঘাতের সাথে তাড়া করছে
ঝড় যেন তাদের পিছু ধাওয়া করছে, কোনো শত্রুর মতো।
যেন শত্রুর ছায়া তাকে অনুসরণ করছে,
তারা যতই পালানোর চেষ্টা করুক, ঝড় তাদের তাড়া করেই চলেছে।
এবং সামনে ঝুঁকে পড়ছে তার মাথা,
ঝড়ের ধাক্কায় জাহাজ ক্রমাগত ঝুঁকে যাচ্ছে।
জাহাজ দ্রুত ছুটছিল, প্রবল বাতাস গর্জন করছিল,
প্রবল বাতাসের চাপে জাহাজ দ্রুতগতিতে দক্ষিণ দিকে ধাবিত হলো।
এবং আমরা দক্ষিণ দিকে পালিয়ে গেলাম।
তারা বাধ্য হয়ে দক্ষিণ দিকে চলে গেল।
এবং এখন কুয়াশা ও তুষার এলো,
দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছানোর পর চারপাশে কুয়াশা ও তুষার জমে গেল।
এবং আবহাওয়া ভয়ঙ্কর ঠান্ডা হয়ে উঠল।
তুষারময় পরিবেশের কারণে প্রচণ্ড ঠান্ডা অনুভূত হলো।
এবং মাস্তুলের সমান উঁচু বরফ ভেসে এলো,
বিশাল বরফখণ্ডগুলো জাহাজের চারপাশে ভেসে বেড়াচ্ছিল।
যা পান্নার মতো সবুজ।
বরফের রঙ সবুজাভ ছিল, যা তার রহস্যময় সৌন্দর্য বোঝাচ্ছে।
অবশেষে একটি অ্যালবাট্রস পাখি আমাদের পথ অতিক্রম করল,
এই রহস্যময় পাখিটি তাদের বিপদের সময় উপস্থিত হলো।
কুয়াশার মধ্য দিয়ে সে এল;
পাখিটি ধোঁয়াটে পরিবেশের মধ্য দিয়ে উড়ে আসল।
যেন এটি ছিল একটি খ্রিস্টান আত্মা,
অ্যালবাট্রসকে শুভ লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল।
আমরা এটিকে ঈশ্বরের নামে অভ্যর্থনা জানালাম।
তারা পাখিটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে স্বাগত জানাল।
এটি এমন খাবার খেল যা আগে কখনো খায়নি,
অ্যালবাট্রসটি নাবিকদের দেওয়া খাবার গ্রহণ করল, যা সে আগে খায়নি।
এবং এটি চারপাশে ঘুরে ঘুরে উড়তে লাগল।
পাখিটি আনন্দের সাথে জাহাজের চারদিকে উড়ছিল।
বরফ বজ্রপাতের মতো শব্দ করে ফেটে গেল;
পাখির উপস্থিতির পর বরফ ফেটে পথ তৈরি হলো, যেন এটি এক অলৌকিক ঘটনা।
নাবিক আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল!
জাহাজের চালক বা হেলসম্যান বরফ ভেঙে তৈরি হওয়া পথ দিয়ে জাহাজকে পরিচালিত করল।
এবং পেছন থেকে এক ভালো দক্ষিণী বাতাস প্রবাহিত হলো;
এখন অনুকূল বাতাস বইতে শুরু করল, যা তাদের যাত্রা সহজ করল।
অ্যালবাট্রসটি আমাদের অনুসরণ করল,
পাখিটি তাদের সঙ্গী হয়ে রইল, যা শুভ লক্ষণের প্রতীক মনে করা হচ্ছিল।
এবং প্রতিদিন, খাবার বা খেলার জন্য,
পাখিটি প্রতিদিন জাহাজের কাছে আসত, হয়তো খাবারের আশায় অথবা শুধু ঘুরে বেড়ানোর জন্য।
নাবিকদের ডাকে হাজির হতো!
নাবিকরা ডাকলে পাখিটি তাদের কাছে চলে আসত।
কুয়াশা বা মেঘের মধ্যে, মাস্তুল বা পালেও,
যেকোনো আবহাওয়াতেই পাখিটি জাহাজের মাস্তুল বা পালের ওপর বসে থাকত।
এটি নয়টি সন্ধ্যা প্রার্থনার জন্য বসে থাকত;
এটি টানা নয় দিন ধরে জাহাজের কাছে অবস্থান করেছিল।
রাতভর, কুয়াশার ধোঁয়ার মাঝে,
ঘন কুয়াশার মধ্যেও রাতজুড়ে এটি কাছাকাছি ছিল।
সাদা চাঁদের আলো ঝলমল করছিল।
রাতে কুয়াশার মাঝে চাঁদের আলো জ্বলজ্বল করছিল, যা এক রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করছিল।
'ঈশ্বর তোমাকে রক্ষা করুন, বৃদ্ধ নাবিক!
অতিথি বিস্মিত হয়ে নাবিকের জন্য শুভকামনা জানাল।
সেই দানবদের হাত থেকে, যারা তোমাকে এত কষ্ট দিচ্ছে!—
সে বুঝতে পারল যে নাবিকের ভয়ানক কোনো শাস্তি চলছে, যেন দানবেরা তাকে কষ্ট দিচ্ছে।
তুমি এভাবে কেন দেখছ?'—
অতিথি অবাক হলো, কারণ নাবিকের চেহারায় এক গভীর শোক ফুটে উঠছিল।
আমার ক্রসবো দিয়ে আমি অ্যালবাট্রসটিকে গুলি করলাম।
গল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত! নাবিক সেই শুভ লক্ষণের পাখিটিকে মেরে ফেলল, যা তার পরবর্তী দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
PART II
সূর্য এখন ডান দিক থেকে উঠল:
আগের অংশে সূর্য বাম দিক থেকে উঠছিল, কিন্তু এখন এটি ডান দিক থেকে উঠছে, যা নির্দেশ করে যে জাহাজের দিক পরিবর্তন হয়েছে।
সমুদ্রের বুক থেকে সে উঠল,
সূর্য সমুদ্র থেকে উদিত হলো, এটি এক সাধারণ দৃশ্য কিন্তু এখানে এক অস্বাভাবিক অনুভূতি কাজ করছে।
তবুও কুয়াশার আড়ালে রইল, এবং বাম দিকে
সূর্যের আলো পুরোপুরি পরিষ্কার ছিল না, কারণ কুয়াশা তখনও ছড়িয়ে ছিল।
সমুদ্রের মধ্যে ডুবে গেল।
সূর্য অস্ত গেল, যা সময়ের প্রবাহ বোঝাচ্ছে।
এবং ভালো দক্ষিণী বাতাস তখনও পিছন থেকে বইছিল,
অ্যালবাট্রস মারা যাওয়ার পরও প্রথমে তাদের যাত্রা স্বাভাবিক চলছিল।
কিন্তু কোনো মিষ্টি পাখি আর অনুসরণ করল না,
এখন আর অ্যালবাট্রস নেই, এটি একটি শূন্যতার অনুভূতি সৃষ্টি করল।
কোনো দিন আর খাবারের জন্য বা খেলার জন্যও না,
অ্যালবাট্রসটি প্রতিদিন তাদের সঙ্গ দিত, কিন্তু এখন সেটি নেই।
নাবিকদের ডাকে আর কেউ আসল না!
এখন তাদের ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য আর কোনো পাখি নেই, যা একটি অশুভ লক্ষণ।
এবং আমি এক অভিশপ্ত কাজ করেছিলাম,
নাবিক বুঝতে পারল যে সে এক ভয়ংকর ভুল করেছে।
এবং এটি আমাদের দুর্ভোগ আনবে:
এখন তার এই কাজের পরিণতি সবাইকে কষ্ট দেবে।
কারণ সবাই বলল, আমি সেই পাখিটিকে হত্যা করেছি
সবাই বিশ্বাস করছিল যে পাখিটিকে হত্যা করাই তাদের বিপদের কারণ হবে।
যে পাখিটি বাতাস বইয়ে দিয়েছিল।
তারা মনে করছিল যে পাখিটি শুভ লক্ষণ ছিল এবং তার কারণেই অনুকূল বাতাস বইছিল।
'হায় দুঃখী!'- তারা বলল, 'এই পাখিটিকে হত্যা করেছো,'
সবাই নাবিককে অভিশাপ দিল কারণ তারা বিশ্বাস করল যে পাখিটিই তাদের জন্য শুভ ছিল।
যে পাখিটি বাতাস বইয়ে দিয়েছিল!
তারা নিশ্চিত ছিল যে অ্যালবাট্রসই তাদের জন্য অনুকূল বাতাস এনে দিয়েছিল।
না এটি ম্লান ছিল, না লাল, যেন ঈশ্বরের নিজের মাথা,
সূর্য এখন স্বাভাবিক ছিল না, এটি ভিন্ন রকম লাগছিল, যেন এটি এক অশুভ প্রতীক।
গৌরবময় সূর্য উদিত হলো:
সূর্য এখনও আকাশে ছিল, কিন্তু এটি এক ভিন্ন রূপ ধারণ করেছিল।
তারপর সবাই বলল, আমি সেই পাখিটিকে হত্যা করেছি
এখন সবাই নাবিকের দোষ দিয়েছে, কিন্তু ভিন্নভাবে।
যে কুয়াশা এবং ধোঁয়া নিয়ে এসেছিল।
আগের মতো নয়, এবার তারা মনে করল যে পাখিটিই কুয়াশা আর ধোঁয়ার কারণ ছিল।
'এইরকম পাখিকে হত্যা করা সঠিক ছিল,' তারা বলল,
এবার সবাই তার পক্ষে কথা বলতে লাগল, যেন পাখিকে মারা ঠিক ছিল।
যে কুয়াশা এবং ধোঁয়া নিয়ে আসে।
এখন তাদের মত পাল্টে গেছে, তারা মনে করছে পাখিটিই আগে তাদের জন্য সমস্যার কারণ ছিল।
সুন্দর বাতাস বইল, সাদা ফেনা উড়ল,
নাবিকরা দেখতে পেল যে বাতাস বইছে, তরঙ্গের ফেনা উড়ছে, জাহাজ আগাচ্ছে।
জাহাজের পেছনে জলরেখা অবাধে গঠিত হলো;
জাহাজ যখন চলছিল, তখন তার পেছনে এক সাদা রেখার সৃষ্টি হচ্ছিল।
আমরা প্রথম যারা প্রবেশ করেছিলাম
তারা এমন এক সাগরে প্রবেশ করেছিল যেখানে আগে কেউ যায়নি।
সেই নীরব সাগরে।
তারা এমন এক সমুদ্রে পৌঁছাল, যেখানে কোনো শব্দ ছিল না, সব ছিল স্থির।
বাতাস বন্ধ হয়ে গেল, পালে বাতাস পড়া বন্ধ হলো,
আচমকা বাতাস থেমে গেল, ফলে জাহাজের চলা বন্ধ হয়ে গেল।
এটি ছিল সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা;
পুরো পরিস্থিতি এক অদ্ভুত বিষণ্নতায় ভরে গেল।
এবং আমরা কথা বলতাম শুধু নীরবতা ভাঙতে,
নাবিকরা এতটাই হতবাক হয়ে গিয়েছিল যে তারা শুধু কথা বলছিল এই গভীর নীরবতা কাটানোর জন্য।
সাগরের নীরবতা ভাঙতে!
চারপাশে এমন নীরবতা ছিল যে মনে হচ্ছিল এটি ভয়ংকর কিছু ঘটনার পূর্বাভাস।
একটা উত্তপ্ত ও তামাটে রঙের আকাশে,
সূর্যের আলো এতটাই গরম আর অস্বাভাবিক লাগছিল যে আকাশ তামাটে হয়ে গিয়েছিল।
রক্তের মতো লাল সূর্য, দুপুরবেলা,
সূর্যের রং লালচে হয়ে উঠল, যা বিপদের সংকেত দিচ্ছিল।
ঠিক মাস্তুলের ওপরে স্থির হয়ে থাকল,
সূর্য মাঝ আকাশে স্থির ছিল, যা সময় যেন থেমে গেছে এমন অনুভূতি দিচ্ছিল।
চাঁদের চেয়েও বড় ছিল না।
সূর্য ছোট এবং অস্বাভাবিক দেখাচ্ছিল, যা এক রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করছিল।
দিনের পর দিন, দিনের পর দিন,
সময় যেন থমকে গেছে। তারা অসহায়ভাবে আটকে আছে।
আমরা আটকে গেলাম, না বাতাস, না কোনো গতি;
বাতাস বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে জাহাজও স্থির হয়ে আছে।
যেন এক আঁকা জাহাজের মতো স্থির,
বাস্তব জাহাজ না হয়ে যেন এটি একটি ছবি হয়ে গেছে, কোনো গতি নেই।
একটি আঁকা সমুদ্রের উপর।
বাস্তব জগতটি যেন এখন কেবলমাত্র একটি স্থিরচিত্রের মতো মনে হচ্ছে।
জল, জল, চারদিকে শুধু জল,
তারা বিশাল সমুদ্রে আছে, কিন্তু তাদের জন্য কোনো পানযোগ্য জল নেই।
এবং সব কাঠের তক্তা শুকিয়ে আসছিল;
প্রচণ্ড রোদে জাহাজের কাঠ শুকিয়ে সংকুচিত হয়ে পড়ছিল।
জল, জল, চারদিকে শুধু জল,
তারা চারপাশে জল দেখছে, কিন্তু সেটি তাদের কাজে আসছে না।
কিন্তু এক ফোঁটা পান করার জলও নেই।
সামুদ্রিক পানি লবণাক্ত, যা পান করা যায় না। এটি তাদের দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
গভীর সমুদ্রও পচতে শুরু করল: হে খ্রিস্ট!
পানির অবস্থা এত খারাপ হয়ে গেল যে এটি যেন পচে যাচ্ছে।
এমন কিছু কখনও ঘটতে পারে!
নাবিক অবাক হচ্ছে যে এমন অবস্থা কিভাবে হলো!
হ্যাঁ, পিচ্ছিল জিনিসপত্র পায়ে ভর দিয়ে হামাগুড়ি দিল
সমুদ্রের উপর অদ্ভুত জীবেরা হামাগুড়ি দিচ্ছে।
পিচ্ছিল সমুদ্রের উপর।
সমুদ্রও এখন পিচ্ছিল হয়ে গেছে, যা এক ভয়াবহ দৃশ্য তৈরি করছে।
চারপাশে, চারপাশে, ঘূর্ণির মতো নাচতে লাগল
কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে লাগল, যা বাস্তবতার বাইরের কিছু।
মৃত্যুর আগুন রাতে নাচতে লাগল;
এক অলৌকিক দৃশ্য, যেখানে ভৌতিক আলো জ্বলছে।
জল যেন এক ডাইনের তেলের মতো,
পানি যেন যাদুকরী কিছুতে পরিণত হয়েছে।
সবুজ, নীল, আর সাদা রঙে জ্বলছিল।
পানির রং অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, যা অলৌকিকতার ইঙ্গিত দেয়।
আর কিছু লোক স্বপ্নে নিশ্চিত হলো
তাদের মনে হলো, স্বপ্নের মধ্যে তারা কোনো উত্তর পাচ্ছে।
সে আত্মার কথা, যে আমাদের এত কষ্ট দিচ্ছে;
তারা বিশ্বাস করতে লাগল যে কোনো অতিপ্রাকৃত শক্তি তাদের শাস্তি দিচ্ছে।
নয় ফ্যাদম গভীর থেকে সে আমাদের অনুসরণ করেছিল
(১ ফ্যাদম = ৬ ফুট) অর্থাৎ, ৫৪ ফুট গভীর থেকে এই আত্মা তাদের সঙ্গ দিচ্ছিল।
কুয়াশা ও তুষারের দেশ থেকে।
সেই স্থান যেখানে তারা অ্যালবাট্রসকে হত্যা করেছিল।
এবং প্রতিটি জিহ্বা, প্রচণ্ড তৃষ্ণার কারণে,
তৃষ্ণার কারণে তাদের মুখ শুকিয়ে গেছে।
মূল থেকেই শুকিয়ে গিয়েছিল;
পানির অভাবে তাদের কথা বলার শক্তিও নেই।
আমরা কথা বলতে পারছিলাম না, ঠিক যেন
এতটাই ক্লান্তি আর তৃষ্ণা যে কথা বলাও অসম্ভব।
আমরা যেন ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে পড়েছি।
তাদের গলা এত শুকিয়ে গেছে, যেন ধোঁয়া তাদের দম বন্ধ করে দিচ্ছে।
আহ! দুর্ভাগ্য! কী ভয়ংকর দৃষ্টিতে
সবাই নাবিকের দিকে ক্ষোভের চোখে তাকাচ্ছে।
পেয়েছি বৃদ্ধ ও যুবক উভয়ের কাছ থেকে!
পুরো জাহাজের মানুষ এখন তার বিরুদ্ধে।
ক্রুশের পরিবর্তে, অ্যালবাট্রসকে
সাধারণত খ্রিস্টানরা ক্রুশ ঝুলিয়ে রাখে, কিন্তু এখন তার গলায় অ্যালবাট্রস ঝোলানো হয়েছে।
আমার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হলো।
এটি এক প্রতীকী শাস্তি, যা বোঝায় যে সে এখন পাপের বোঝা বহন করছে।
PART III
এক দীর্ঘ ক্লান্তিকর সময় পার হলো। প্রতিটি গলা
নাবিকরা প্রচণ্ড তৃষ্ণায় কষ্ট পাচ্ছে, সময় যেন থমকে আছে।
শুকিয়ে গেছে, এবং প্রতিটি চোখ ফ্যাকাশে।
তারা এতটাই দুর্বল যে চোখগুলো নিষ্প্রাণ দেখাচ্ছে।
এক ক্লান্তিকর সময়! এক ক্লান্তিকর সময়!
একই বিষয় আবার বলা হয়েছে, যা তাদের কষ্টের তীব্রতা বোঝাচ্ছে।
কীভাবে প্রতিটি ক্লান্ত চোখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে,
ক্লান্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তারা।
পশ্চিম দিকে তাকিয়ে আমি দেখলাম
কিছু একটা দেখতে পেল নাবিক।
আকাশে কিছু একটা।
এটি কি তাদের মুক্তির সংকেত? নাকি আরেকটি বিপদ?
প্রথমে এটি ছোট্ট এক বিন্দুর মতো লাগল,
দূর থেকে এক রহস্যময় কিছু দেখা যাচ্ছে।
তারপর এটি এক কুয়াশার মতো লাগল;
ধীরে ধীরে আকার বদলাচ্ছে।
এটি নড়ল, নড়ল, এবং শেষে নিল
কিছুর গতি স্পষ্ট হতে শুরু করল।
একটা নির্দিষ্ট রূপ, আমি বুঝতে পারলাম।
এটি একটি জাহাজ বলে মনে হচ্ছে।
একটি বিন্দু, একটি কুয়াশা, একটি রূপ, আমি বুঝতে পারলাম!
তিনটি ধাপে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এবং এটি আরও কাছে আসতে থাকল:
রহস্যজনক জাহাজটি এগিয়ে আসছে।
যেন এটি জলপরীকে এড়িয়ে চলছে,
এটি যেন অতিপ্রাকৃত কিছু এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে।
এটি ডুব দিল, বাঁক নিল, এবং ঘুরে গেল।
এটি সাধারণ জাহাজের মতো চলাচল করছে না।
তৃষ্ণায় পুড়ে যাওয়া গলা, শুকিয়ে যাওয়া কালো ঠোঁট,
তাদের অবস্থা ভীষণ খারাপ, পানি না পেয়ে ঠোঁট কালো হয়ে গেছে।
আমরা না হাসতে পারলাম, না কাঁদতে পারলাম;
তারা এতটাই দুর্বল যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর শক্তি নেই।
প্রচণ্ড তৃষ্ণার কারণে আমরা বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম!
পানি না পাওয়ার কারণে সবাই যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে।
আমি আমার বাহু কামড়ে ধরলাম, আমি আমার রক্ত চুষে নিলাম,
তৃষ্ণার চূড়ান্ত পর্যায়ে সে নিজের রক্ত পান করল।
এবং চিৎকার করে বললাম, এক জাহাজ! এক জাহাজ!
হঠাৎ করে সে একটি জাহাজ দেখতে পেল, যা মুক্তির আশা জাগাল।
তৃষ্ণায় পুড়ে যাওয়া গলা, শুকিয়ে যাওয়া কালো ঠোঁট,
নাবিকদের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।
তারা হতবাক হয়ে আমার ডাক শুনল:
তারা এতটাই ক্লান্ত যে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছে না।
হে করুণা! তারা আনন্দে হাসল,
তারা এতটাই আশাবাদী হয়ে গেল যে ক্লান্তির মধ্যেও হাসল।
এবং সবাই একসঙ্গে দম টানল।
নতুন আশার আলো দেখার সঙ্গে সঙ্গে সবার উত্তেজনা বেড়ে গেল।
যেন তারা সবাই একসঙ্গে জল পান করছে।
আশার কারণে মনে হলো যেন তারা প্রকৃতপক্ষে পানি পান করছে।
দেখো! দেখো! (আমি চিৎকার করে বললাম) এটি আর বাঁক নিচ্ছে না!
রহস্যময় জাহাজটি তাদের দিকেই স্থিরভাবে আসছে।
এটি আমাদের কল্যাণের জন্য আসছে;
তারা আশা করছে, এই জাহাজ তাদের রক্ষা করবে।
না কোনো বাতাস, না কোনো জোয়ার,
এটি স্বাভাবিক নিয়মে চলছে না, যা অদ্ভুত।
এটি স্থিরভাবে সোজা চলছে!
বাতাস ছাড়াই এটি চলছে, যা অলৌকিক।
পশ্চিমের ঢেউ জ্বলন্ত আগুনের মতো ছিল।
সূর্য অস্ত যাচ্ছিল এবং সমুদ্র লালচে হয়ে উঠেছিল।
দিন প্রায় শেষ হয়ে গেছে!
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।
প্রায় পশ্চিমের ঢেউয়ের উপরেই
সূর্য প্রায় পুরোপুরি অস্ত গেছে।
বিশাল উজ্জ্বল সূর্য স্থির হয়ে আছে;
সূর্যাস্তের মুহূর্ত চলছে।
ঠিক তখনই সেই অদ্ভুত রূপ আচমকা এগিয়ে এলো
রহস্যময় জাহাজটি সূর্যের সামনে এসে পড়ল।
আর সঙ্গে সঙ্গেই সূর্য ছায়ায় ছেয়ে গেল,
রহস্যময় জাহাজটি সূর্যের সামনে এসে পড়ল, ফলে সূর্যের আলো ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল।
(স্বর্গের মা, আমাদের করুণা করুন!)
নাবিকরা এতটাই আতঙ্কিত যে ঈশ্বরের আশীর্বাদ কামনা করছে।
যেন কারাগারের গ্রিলের ফাঁক দিয়ে সে তাকিয়ে আছে
সূর্য এখন খাঁচার পিছনে আটকানো মনে হচ্ছে, যা ভীতিকর এক পরিবেশ তৈরি করছে।
তার বিস্তৃত ও প্রজ্জ্বলিত মুখ নিয়ে।
সূর্যের আলো আগের মতো স্বাভাবিক নয়, বরং এটি আতঙ্কজনক ও দাহ্য দেখাচ্ছে।
হায়! (আমি ভাবলাম, এবং আমার হৃদয় জোরে ধুকপুক করতে লাগল)
নাবিক আতঙ্কে পড়ল, কারণ এটি সাধারণ কোনো ঘটনা নয়।
কী দ্রুত এটি কাছে আসছে!
রহস্যময় জাহাজটি দ্রুত তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।
ওইগুলো কি তার পাল, যা সূর্যের আলোয় চকচক করছে,
তিনি বুঝতে পারছেন না, এটা স্বাভাবিক নাকি অলৌকিক কিছু।
যেন উদ্বিগ্ন মাকড়সার জালের মতো?
জাহাজের পাল এত হালকা ও অস্বাভাবিক লাগছে যে তা মাকড়সার জালের মতো মনে হচ্ছে।
ওগুলো কি তার পাঁজর, যার মধ্য দিয়ে সূর্য
এখানে বোঝানো হচ্ছে, জাহাজটি যেন কঙ্কালের মতো শুষ্ক ও ফাঁপা।
তাকিয়ে আছে, যেন লোহার শিকের ফাঁক দিয়ে?
এটি আরও নিশ্চিত করছে যে জাহাজটি সাধারণ কিছু নয়, বরং এটি কঙ্কালের মতো দেখতে।
এবং ওই নারীই কি তার একমাত্র নাবিক?
জাহাজের ক্রু বলতে একজন নারীকে দেখা যাচ্ছে, যা খুবই অস্বাভাবিক।
ওটা কি মৃত্যুর প্রতীক? এবং সেখানে কি দু’জন আছে?
নাবিক বুঝতে পারছে, এটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, বরং এখানে অলৌকিক কিছু ঘটতে যাচ্ছে।
মৃত্যু কি ঐ নারীর সঙ্গী?
এখানে বোঝানো হচ্ছে, এক নারী এবং মৃত্যু একসঙ্গে এসেছে। নারীটি হল "Life-in-Death"।
তার ঠোঁট ছিল লাল, তার দৃষ্টিতে ছিল স্বাধীনতা,
Life-in-Death নারীটি সুন্দর কিন্তু ভীতিকর।
তার চুল ছিল সোনার মতো হলুদ:
চুলের বর্ণ তার সৌন্দর্য ও অলৌকিকতার ইঙ্গিত দেয়।
তার ত্বক ছিল কুষ্ঠরোগীর মতো ফ্যাকাশে সাদা,
তার চেহারায় এক ধরনের ভীতিকর অসুস্থতা ছিল।
সে ছিল দুঃস্বপ্নের মতো "জীবন-মধ্যে-মৃত্যু",
এই নারী হল Life-in-Death, যে মানুষের প্রাণ নেয় না, বরং তাদেরকে এক ধরণের অভিশপ্ত জীবন দেয়।
যে মানুষের রক্তকে ঠাণ্ডায় জমিয়ে দেয়।
তার উপস্থিতি এতটাই ভীতিকর যে মানুষ আতঙ্কে জমে যায়।
নগ্ন ও শুষ্ক জাহাজটি পাশে এসে পৌঁছাল,
এটি কোনো সাধারণ জাহাজ নয়, বরং মৃত্যুর বাহন।
এবং দু’জন পাশা খেলছিল;
Death (মৃত্যু) ও Life-in-Death (জীবন-মধ্যে-মৃত্যু) জাহাজের নাবিকদের ভাগ্য নির্ধারণ করছে।
'খেলা শেষ! আমি জিতেছি! আমি জিতেছি!'
Life-in-Death জিতেছে, যার মানে হল নাবিক মরবে না, কিন্তু সে এক ভয়ংকর অভিশাপে আটকে থাকবে।
সে বলল, এবং তিনবার শিস বাজাল।
শিস দেওয়া মানে নাবিকের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে।
সূর্যের কিনারা ডুবে গেল; তারা ফুটে উঠল;
সূর্যাস্ত হল, আর রাত শুরু হল।
এক লাফে অন্ধকার নেমে এল;
হঠাৎ করেই চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেল, যা আরও রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করল।
সমুদ্রের ওপারে দূর থেকে আসা এক ফিসফিসানি শুনতে পাওয়া গেল,
অলৌকিক শক্তির উপস্থিতি বোঝানোর জন্য এই রহস্যময় শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রেতাত্মার জাহাজ বিদায় নিল।
তাদের ভাগ্য নির্ধারিত করার পর রহস্যময় জাহাজ চলে গেল।
আমরা শুনলাম এবং পাশে তাকিয়ে দেখলাম!
তারা বুঝতে পারছে কিছু ভয়ংকর ঘটতে যাচ্ছে।
ভয় আমার হৃদয়কে চুষে খাচ্ছিল, যেন এক পেয়ালায় পান করা হচ্ছে,
তার ভয় এতটাই প্রবল যে মনে হচ্ছে এটি তার জীবনশক্তি শুষে নিচ্ছে।
আমার প্রাণরস যেন শুষে নিচ্ছে!
আতঙ্কে তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে।
একজনের পর একজন, তারাভরা চাঁদের আলোয়,
একে একে সমস্ত নাবিক মারা যাচ্ছে।
যত দ্রুত যে কেউ কাঁদতে বা দীর্ঘশ্বাস ফেলতে পারে না,
তারা এত তীব্র যন্ত্রণায় মারা যাচ্ছে যে কোনো শব্দ বের করার সময় পাচ্ছে না।
প্রত্যেকেই যন্ত্রণায় মুখ ফিরিয়ে নিল,
মৃত্যুর সময় তাদের চোখে গভীর আতঙ্ক ফুটে উঠল।
এবং তারা আমাকে তাদের চোখে অভিশাপ দিল।
তারা বিশ্বাস করে, এই দুর্ভোগের কারণ আমিই।
চার গুণ পঞ্চাশ জীবিত মানুষ,
২০০ নাবিক ছিল জাহাজে।
(আমি কোনো দীর্ঘশ্বাস বা আর্তনাদ শুনলাম না)
সবাই একসঙ্গে নিঃশব্দে মারা গেল।
একটি ভারী শব্দে, একেকটি নিথর দেহ,
তাদের মৃতদেহ জাহাজের ডেকে পড়তে লাগল।
তারা একে একে পড়ে গেল।
সবাই মারা গেল, একমাত্র প্রাচীন নাবিক (Ancient Mariner) ছাড়া।
আত্মাগুলো তাদের দেহ থেকে উড়ে গেল,—
নাবিকদের আত্মা তাদের মৃতদেহ থেকে বেরিয়ে গেল।
তারা সুখ বা দুঃখের দিকে উড়ে গেল!
কেউ স্বর্গে গেল, কেউ নরকে—যেমন তাদের কর্মফল অনুযায়ী।
এবং প্রতিটি আত্মা, আমার পাশ দিয়ে চলে গেল,
নাবিক একা বেঁচে আছে, কিন্তু মৃতদের আত্মাগুলো তার চারপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে।
আমার ক্রসবোয়ের শিসের মতো!
সে যখন আলবাট্রস পাখিটিকে হত্যা করেছিল, তখন তীরের ছোঁড়া শব্দের মতোই আত্মাগুলো উড়ে যাচ্ছে। এটা বোঝায় যে তার কর্মের ফল সে ভোগ করছে।
"আমি তোমাকে ভয় পাই, হে প্রাচীন নাবিক!
কবির কল্পনায় শ্রোতা ভয় পেয়ে নাবিককে সম্বোধন করছে।
আমি তোমার কঙ্কালসার হাতকে ভয় পাই!
নাবিক এতই দুর্বল হয়েছে যে তার হাত কঙ্কালের মতো দেখাচ্ছে।
এবং তুমি লম্বা, শীর্ণকায়, আর তামাটে,
তার ত্বক রোদে পোড়া, শুষ্ক এবং অসুস্থ দেখাচ্ছে।
যেন সূর্যতপ্ত সমুদ্রের বালু।
বালুর মতো শুষ্ক ও প্রাণহীন লাগছে তাকে।
আমি তোমাকে ভয় পাই এবং তোমার জ্বলজ্বলে চোখকে,
নাবিকের চোখ অস্বাভাবিকভাবে জ্বলছে, যা তার অভিশপ্ত অবস্থার ইঙ্গিত দেয়।
এবং তোমার তামাটে, কঙ্কালসার হাতকে।
তার উপস্থিতি আতঙ্কজনক।
"ভয় পেও না, ভয় পেও না, হে বিবাহ-অতিথি!
নাবিক তাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে।
এই দেহ কিন্তু মাটিতে পড়েনি।
নাবিক বেঁচে ছিল, সে মরেনি, যদিও তার চারপাশের সবাই মারা গেছে।
একাকী, একাকী, সম্পূর্ণ একাকী,
সে সম্পূর্ণ একা সমুদ্রে ভেসে বেড়াচ্ছিল।
এক বিশাল, বিশাল সমুদ্রে একাকী!
চারদিকে শুধু জল, আর সে একমাত্র জীবিত মানুষ।
এবং কোনো সাধু তার প্রতি করুণা করল না
তার দুর্দশার প্রতি কেউ দয়া দেখালো না।
আমার যন্ত্রণাগ্রস্ত আত্মার উপর।
সে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিল।
অনেক মানুষ, এত সুন্দর!
তার সহযাত্রীরা একসময় সুস্থ ও প্রাণবন্ত ছিল।
এবং তারা সবাই মৃত হয়ে শুয়ে ছিল:
এখন তারা সবাই মৃতদেহ হয়ে পড়ে আছে।
এবং হাজার হাজার বিকৃত প্রাণী
সমুদ্রের নিচে ভাসমান অদ্ভুত, কদর্য জলজ প্রাণী।
বেঁচে রইল; এবং আমিও।
তার চারপাশে সব প্রাণী বেঁচে আছে, শুধু মানুষরা মারা গেছে—এটাই তার শাস্তি।
PART IV
English:
"I fear thee, ancient Mariner!
I fear thy skinny hand!
And thou art long, and lank, and brown,
As is the ribbed sea-sand."
বাংলা অনুবাদ:
"আমি তোমাকে ভয় করি, হে প্রাচীন নাবিক!
আমি ভয় পাই তোমার শুকনো হাত!
তুমি তো লম্বা, রুগ্ন, আর বাদামি,
যেন সমুদ্রের তীরের খসে পড়া বালুকণা।"
ব্যাখ্যা:
এখানে বিয়েবাড়ির অতিথি (Wedding-Guest) ভয় পাচ্ছে, কারণ নাবিকটি (Mariner) দেখতে অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও ভৌতিক মনে হচ্ছে। তার শরীর লম্বা, পাতলা, শুকনো ও পাণ্ডুর বর্ণের, যা তাকে সমুদ্রের শুষ্ক বালির মতো করে তুলেছে।
English:
"I fear thee and thy glittering eye,
And thy skinny hand, so brown."—
"Fear not, fear not, thou Wedding-Guest!
This body dropt not down."
বাংলা অনুবাদ:
"আমি ভয় পাই তোমার ঝলমলে চোখ,
আর তোমার শুকনো বাদামি হাত!"—
"ভয় কোরো না, ভয় কোরো না, ও বিয়েবাড়ির অতিথি!
এই দেহ তখনো মাটিতে পড়েনি!"
ব্যাখ্যা:
বিয়েবাড়ির অতিথি আরও একবার ভয় পেয়ে বলে যে, নাবিকের চোখ অস্বাভাবিকভাবে উজ্জ্বল এবং তার হাত ভীতিকর। কিন্তু নাবিক তাকে আশ্বস্ত করে বলে, সে এখনো জীবিত, তার দেহ তখনো মাটিতে পড়েনি (অর্থাৎ সে মারা যায়নি)।
English:
"Alone, alone, all, all alone,
Alone on a wide wide sea!
And never a saint took pity on
My soul in agony."
বাংলা অনুবাদ:
"একা, একা, পুরোপুরি একা,
একা এক বিশাল সমুদ্রে!
কোনো পবিত্র আত্মাই দয়া করেনি,
আমার কষ্টভরা আত্মার প্রতি।"
ব্যাখ্যা:
এখানে নাবিক তার নিঃসঙ্গতা বর্ণনা করছে। তার সঙ্গীরা সবাই মারা গেছে, সে একা এক বিশাল সমুদ্রে ভেসে আছে। এমনকি কোনো দেবদূত বা স্বর্গীয় শক্তিও তার কষ্ট দেখে দয়া করেনি।
English:
"The many men, so beautiful!
And they all dead did lie:
And a thousand thousand slimy things
Lived on; and so did I."
বাংলা অনুবাদ:
"অনেক পুরুষ, এত সুন্দর!
এবং তারা সবাই মৃত হয়ে পড়ে ছিল:
আর হাজার হাজার কদর্য জীর্ণ প্রাণী
জীবিত ছিল; আর আমিও বেঁচে ছিলাম।"
ব্যাখ্যা:
নাবিক দুঃখের সঙ্গে দেখে, তার সমস্ত নাবিকসঙ্গীরা মারা গেছে, অথচ সমুদ্রে ঘৃণ্য কদর্য প্রাণীগুলো (সম্ভবত জলজ কীট-পতঙ্গ) এখনও জীবিত। এবং তার নিজের ভাগ্যও তাদের মতোই—সে এখনো বেঁচে আছে, কিন্তু এক ভয়ানক অভিশাপে।
English:
"I looked upon the rotting sea,
And drew my eyes away;
I looked upon the rotting deck,
And there the dead men lay."
বাংলা অনুবাদ:
"আমি তাকালাম পচে যাওয়া সমুদ্রের দিকে,
আর দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম;
আমি তাকালাম পচে যাওয়া জাহাজের ডেকে,
আর সেখানে মৃত মানুষগুলো পড়ে ছিল।"
ব্যাখ্যা:
নাবিক সমুদ্রের পানিকে মৃত ও পচা বলে বর্ণনা করছে। জাহাজের ডেকেও একই অবস্থা—তার চারপাশে শুধু মৃত্যু আর ধ্বংসের চিহ্ন।
English:
"I looked to heaven, and tried to pray;
But or ever a prayer had gusht,
A wicked whisper came, and made
My heart as dry as dust."
বাংলা অনুবাদ:
"আমি তাকালাম স্বর্গের দিকে, আর প্রার্থনা করার চেষ্টা করলাম;
কিন্তু প্রার্থনা বের হওয়ার আগেই,
এক শয়তানি ফিসফিসানি এল, আর করল
আমার হৃদয়কে শুকনো ধুলার মতো।"
ব্যাখ্যা:
নাবিক মুক্তির জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে চায়, কিন্তু এক অদৃশ্য অভিশাপ তার হৃদয়কে শুষ্ক ও নির্জীব করে ফেলে, ফলে সে প্রার্থনা করতেও পারে না।
English:
"O happy living things! no tongue
Their beauty might declare:
A spring of love gushed from my heart,
And I blessed them unaware."
বাংলা অনুবাদ:
"হে সুখী জীবন্ত প্রাণীগুলো! কোনো ভাষাই
তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারে না:
আমার হৃদয় থেকে ভালোবাসার ঝর্ণা বইল,
আর আমি অজান্তেই তাদের আশীর্বাদ করলাম।"
ব্যাখ্যা:
নাবিক প্রথমবারের মতো অনুভব করে, এমনকি সমুদ্রের কীট-পতঙ্গও জীবনের সৌন্দর্য ধারণ করে। এই উপলব্ধির ফলে, তার হৃদয়ে ভালোবাসার জন্ম হয়, এবং সে অজান্তেই তাদের জন্য আশীর্বাদ করে।
English:
"The self-same moment I could pray;
And from my neck so free
The Albatross fell off, and sank
Like lead into the sea."
বাংলা অনুবাদ:
"ঠিক সেই মুহূর্তে আমি প্রার্থনা করতে পারলাম;
আর আমার গলার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে
শ্বেতপাখিটি (আলবাট্রস) পড়ে গেল,
এবং সীসার মতো গভীরে ডুবে গেল।"
ব্যাখ্যা:
এই স্তবকটি গল্পের মোড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। যখন নাবিক অবশেষে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে স্বীকার করে এবং ভালোবাসা অনুভব করে, তখন তার ওপরের অভিশাপ দূর হয়। আলবাট্রসের লাশ, যা এতদিন তার গলায় অভিশাপ হিসেবে ঝুলছিল, তা পড়ে যায় এবং সমুদ্রের গভীরে ডুবে যায়। এর মাধ্যমে বোঝানো হয় যে, প্রকৃতিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সে তার অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত শুরু করেছে।
PART V
"Oh sleep! it is a gentle thing,
Beloved from pole to pole!
To Mary Queen the praise be given!
She sent the gentle sleep from Heaven,
That slid into my soul."
"ও ঘুম! তুমি কত মধুর এক বস্তু,
যার ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে!
পবিত্র মেরি রাণীকে ধন্যবাদ জানাই,
তিনি স্বর্গ থেকে এই কোমল নিদ্রা পাঠিয়েছেন,
যা ধীরে ধীরে আমার আত্মায় প্রবেশ করেছে।"
নাবিক ঘুমের প্রশংসা করছে, কারণ দীর্ঘ কষ্টের পর অবশেষে সে একটু বিশ্রাম পেয়েছে। সে বিশ্বাস করে, স্বর্গীয় শক্তির (মেরি রাণী, খ্রিস্টান বিশ্বাস অনুযায়ী যিনি দয়ার দেবী) অনুগ্রহেই এই শান্তির ঘুম তার কাছে এসেছে।
"The silly buckets on the deck,
That had so long remained,
I dreamt that they were filled with dew;
And when I awoke, it rained."
"জাহাজের ডেকে পড়ে থাকা ফাঁকা বালতিগুলো,
যা দীর্ঘদিন খালি ছিল,
আমি স্বপ্ন দেখলাম, তারা শিশিরে ভরে গেছে;
আর যখন আমি জেগে উঠলাম, তখন বৃষ্টি হচ্ছিল।"
নাবিক স্বপ্নে দেখে যে ডেকের খালি বালতিগুলো পানি (শিশির) দিয়ে ভরে গেছে, যা তার পানির তৃষ্ণাকে বোঝায়। যখন সে জেগে ওঠে, সে দেখে বাস্তবেও বৃষ্টি শুরু হয়েছে, যা তার জন্য এক স্বস্তির মুহূর্ত।
"My lips were wet, my throat was cold,
My garments all were dank;
Sure I had drunken in my dreams,
And still my body drank."
"আমার ঠোঁট ছিল ভেজা, আমার গলা ছিল ঠান্ডা,
আমার পোশাক সম্পূর্ণ ভিজে গিয়েছিল;
নিশ্চয়ই আমি স্বপ্নেই পানি পান করেছিলাম,
আর এখনো আমার দেহ যেন তা পান করছে।"
দীর্ঘদিন পানিশূন্য থাকার পর নাবিকের জন্য বৃষ্টি এক আশীর্বাদ। সে এতটাই তৃষ্ণার্ত ছিল যে, স্বপ্নেও পানি পান করছিল, আর বাস্তবেও তার শরীর যেন সেই তৃষ্ণা মেটাচ্ছিল।
"I moved, and could not feel my limbs:
I was so light—almost
I thought that I had died in sleep,
And was a blessed ghost."
"আমি নড়লাম, কিন্তু আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অনুভূতি পেলাম না:
আমি এতটাই হালকা অনুভব করছিলাম—প্রায় যেন
ভাবছিলাম, আমি ঘুমের মধ্যেই মারা গেছি,
আর আমি এখন এক আশীর্বাদপ্রাপ্ত আত্মা।"
নাবিক এতটাই ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, তার নিজের শরীরের অনুভূতি পর্যন্ত ছিল না। সে মনে করেছিল, সে হয়তো মারা গেছে এবং এখন এক আত্মার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে।
"And soon I heard a roaring wind:
It did not come anear;
But with its sound it shook the sails,
That were so thin and sere."
"এবং শীঘ্রই আমি এক গর্জনরত বাতাসের শব্দ শুনতে পেলাম:
কিন্তু তা আমাদের কাছে এল না;
তবু তার গর্জনে জাহাজের পাল কেঁপে উঠল,
যেগুলো তখন এতই পাতলা আর শুকনো হয়ে গিয়েছিল।"
নাবিক এক প্রচণ্ড বাতাসের শব্দ শুনতে পায়, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বাতাস জাহাজ পর্যন্ত আসে না। শুধু এর গর্জনে শুকনো ও দুর্বল পালের কাপড় কেঁপে ওঠে, যা তার জাহাজের করুণ অবস্থাকে বোঝায়।
"The upper air burst into life!
And a hundred fire-flags sheen,
To and fro they were hurried about!
And to and fro, and in and out,
The wan stars danced between."
"উপরের আকাশ যেন জীবন্ত হয়ে উঠল!
এবং শত শত আগুনের মতো উজ্জ্বল পতাকা,
এদিক-সেদিক দ্রুত ছুটে চলল!
উদ্ভ্রান্তভাবে দিক-বদল করল, এবং তার ফাঁকে
ফিকে তারা গুলো যেন নাচতে লাগল।"
আকাশে এক অদ্ভুত আলো দেখা যায়, যা হয়তো ঝড়ের বিদ্যুৎ অথবা অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রতীক। এই আলোর মাঝে অস্পষ্ট তারাগুলো যেন নাচছে, যা রহস্যময় ও ভৌতিক পরিবেশ তৈরি করে।
"And the coming wind did roar more loud,
And the sails did sigh like sedge,
And the rain poured down from one black cloud;
The Moon was at its edge."
"আর আসন্ন বাতাস আরও প্রবল গর্জন করল,
এবং পালগুলো যেন নলখাগড়ার মতো শব্দ করল,
এক কালো মেঘ থেকে প্রবল বৃষ্টি ঝরতে লাগল;
চাঁদ ছিল সেই মেঘের কিনারায়।"
ঝড় আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। জাহাজের পালগুলো হাওয়ায় কেঁপে উঠছে, যেন তারা কষ্টে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। ঝড়ের মধ্যেও চাঁদ দেখা যাচ্ছে, যা এক অতিপ্রাকৃত দৃশ্য তৈরি করছে।
"The thick black cloud was cleft, and still
The Moon was at its side:
Like waters shot from some high crag,
The lightning fell with never a jag,
A river steep and wide."
"ঘন কালো মেঘটি বিদীর্ণ হলো, তবুও
চাঁদ রয়ে গেল তার পাশেই:
যেন কোনো উঁচু পাহাড় থেকে জলধারা নেমে আসছে,
বিদ্যুৎ ঝলকে পড়ল, একটুও বাঁকা না হয়ে,
এক প্রশস্ত ও খাড়া নদীর মতো।"
ঝড়ের মাঝে চাঁদ স্থির রয়ে গেছে, যা এক রহস্যময় ও অলৌকিক অনুভূতি তৈরি করে। বিদ্যুৎ এমনভাবে পড়ছে যেন পাহাড় থেকে প্রবল গতিতে নদী নামছে, যা ঝড়ের শক্তিশালী রূপকে প্রকাশ করছে।
"The loud wind never reached the ship,
Yet now the ship moved on!
Beneath the lightning and the Moon
The dead men gave a groan."
"প্রবল বাতাস কখনো জাহাজের কাছে পৌঁছায়নি,
তবুও এখন জাহাজ চলতে লাগল!
বিদ্যুৎ আর চাঁদের আলোয়
মৃত নাবিকরা এক করুণ গর্জন করল।"
এখানে এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে। বাতাস জাহাজের পাল ছুঁয়েও দেখেনি, তবুও জাহাজ চলতে শুরু করে। আর মৃত নাবিকদের মৃতদেহ থেকে এক ভৌতিক শব্দ বের হয়, যা ভয়াবহ পরিবেশ তৈরি করে।
"They groaned, they stirred, they all uprose,
Nor spake, nor moved their eyes;
It had been strange, even in a dream,
To have seen those dead men rise."
"তারা গর্জন করল, তারা নড়ল, তারা সবাই উঠে দাঁড়াল,
কিন্তু কেউ কথা বলল না, কেউ চোখও নাড়াল না;
এমন দৃশ্য তো স্বপ্নেও অদ্ভুত মনে হতো,
যেখানে মৃত মানুষদের উঠে দাঁড়াতে দেখা যায়!"
মৃত নাবিকরা যেন পুনরুজ্জীবিত হয়েছে, তবে তারা পুরোপুরি জীবিত নয়। তারা শুধু শরীরের নড়াচড়া করছে, কিন্তু তাদের চোখ স্থির এবং মুখে কোনো কথা নেই। এটি এক ভয়ংকর দৃশ্য, যেন ভূতেরা উঠে এসেছে।
"'I fear thee, ancient Mariner!'
Be calm, thou Wedding-Guest!
'Twas not those souls that fled in pain,
Which to their corses came again,
But a troop of spirits blest:"
"'আমি তোমাকে ভয় পাই, হে প্রাচীন নাবিক!'
শান্ত হও, হে বিয়ের অতিথি!
এগুলো সেই আত্মারা নয়, যারা কষ্ট পেয়ে পালিয়ে গিয়েছিল,
যারা তাদের মৃতদেহে ফিরে এসেছে,
বরং এরা একদল আশীর্বাদপ্রাপ্ত আত্মা।"
বিয়ের অতিথি ভয় পাচ্ছে, কারণ মৃত নাবিকরা উঠে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রাচীন নাবিক তাকে আশ্বস্ত করছে যে, এগুলো অভিশপ্ত আত্মা নয়, বরং তারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত আত্মারা, যারা জাহাজ চালানোর জন্য ফিরে এসেছে।
"For when it dawned—they dropped their arms,
And clustered round the mast;
Sweet sounds rose slowly through their mouths,
And from their bodies passed."
"কারণ যখন ভোর হলো—তারা তাদের হাত নামিয়ে ফেলল,
এবং জাহাজের মাস্তুলের চারপাশে জড়ো হলো;
তাদের মুখ থেকে ধীরে ধীরে মিষ্টি সুর উঠে এল,
এবং তাদের দেহ থেকে বেরিয়ে গেল।"
যখন সকাল হলো, আত্মারা তাদের গতিবিধি বন্ধ করে দিল। তারা মাস্তুলের চারপাশে জড়ো হলো এবং এক ধরনের মিষ্টি সুর বের করতে লাগল। এরপর তাদের আত্মাগুলো দেহ ছেড়ে চলে গেল। এটি বোঝায় যে তারা হয়তো কোনো দায়িত্ব পালন করতে এসেছিল, যা তারা শেষ করেছে।
"Around, around, flew each sweet sound,
Then darted to the Sun;
Slowly the sounds came back again,
Now mixed, now one by one."
"চারদিকে, চারদিকে উড়ে গেল সেই মিষ্টি সুর,
তারপর দ্রুত সূর্যের দিকে ছুটে গেল;
ধীরে ধীরে সেই সুর ফিরে এল,
কখনো মিশ্রিত হয়ে, কখনো একটার পর একটা।"
আত্মাদের তৈরি করা সুর বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, যেন তা পুরো জগতে ছড়িয়ে যাচ্ছে। পরে সেই সুর আবার ফিরে আসে, কখনো একসঙ্গে মিশে যায়, আবার কখনো আলাদা আলাদা শোনা যায়। এটি প্রকৃতির এক অলৌকিক শক্তির প্রতীক হতে পারে।
"Sometimes a-dropping from the sky
I heard the sky-lark sing;
Sometimes all little birds that are,
How they seemed to fill the sea and air
With their sweet jargoning!"
"কখনো কখনো আকাশ থেকে নেমে আসা
স্কাইলার্কের গান শুনতে পেলাম;
কখনো সব ছোট ছোট পাখির ডাক,
যেভাবে তারা যেন সমুদ্র আর আকাশ ভরে দিল
তাদের মিষ্টি কলরবে!"
প্রকৃতি যেন নতুনভাবে জেগে উঠেছে। কবি শুনতে পান স্কাইলার্কের (এক ধরনের চড়ুইয়ের মতো পাখি) গান, এবং অন্য ছোট ছোট পাখিরা যেন পুরো আকাশ ও সমুদ্রকে তাদের সুরে ভরিয়ে দিচ্ছে। এটি বোঝায় যে এখন প্রকৃতি শান্ত হয়েছে এবং শুভ শক্তির উপস্থিতি অনুভূত হচ্ছে।
"And now 'twas like all instruments,
Now like a lonely flute;
And now it is an angel's song,
That makes the heavens be mute."
"এখন যেন সব ধরনের বাদ্যযন্ত্রের মতো,
এখন যেন একাকী বাজতে থাকা বাঁশির মতো;
এবং এখন যেন কোনো স্বর্গীয় দেবদূতের গান,
যা শুনে স্বর্গও নীরব হয়ে যায়।"
পাখিদের গান কখনো সব যন্ত্রের মিলিত সুরের মতো মনে হয়, কখনো বিষাদময় বাঁশির মতো শোনায়, আর কখনো মনে হয় যেন দেবদূতের গাওয়া এক স্বর্গীয় সংগীত, যা পুরো স্বর্গকেও স্তব্ধ করে দেয়। এটি এক মহাজাগতিক অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি।
"It ceased; yet still the sails made on
A pleasant noise till noon,
A noise like of a hidden brook
In the leafy month of June,
That to the sleeping woods all night
Singeth a quiet tune."
"সেই গান থেমে গেল; তবুও পালগুলো
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এক সুমধুর শব্দ করছিল,
যেন গ্রীষ্মকালের পাতাভরা মাসে
কোনো লুকানো ঝর্ণার কলকল শব্দ,
যা সারারাত ঘুমন্ত অরণ্যের মাঝে
শান্ত সুর তোলে।"
যদিও স্বর্গীয় সুর থেমে গেছে, তবুও জাহাজের পাল এক নরম, মিষ্টি শব্দ করছে, যা কবিকে কোনো লুকানো ঝর্ণার মতো মনে হয়। এটি প্রকৃতির সঙ্গে তার নতুন করে সংযোগের ইঙ্গিত দেয়।
"Till noon we quietly sailed on,
Yet never a breeze did breathe:
Slowly and smoothly went the ship,
Moved onward from beneath."
"দুপুর পর্যন্ত আমরা শান্তভাবে চললাম,
তবুও বাতাস একটুও বইল না;
ধীরে ও মসৃণভাবে চলল জাহাজ,
যেন এটি নিচ থেকে চালিত হচ্ছে।"
জাহাজ বাতাস ছাড়াই চলতে লাগল, যা অলৌকিকতার ইঙ্গিত দেয়। মনে হচ্ছে যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি এটি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
"Under the keel nine fathom deep,
From the land of mist and snow,
The spirit slid: and it was he
That made the ship to go."
"জাহাজের নিচে নয় ফ্যাদম গভীরে,
কুয়াশা ও বরফের দেশ থেকে,
এক আত্মা গলে পড়ল: এবং সে-ই ছিল
যে জাহাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।"
জাহাজকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার পেছনে এক অতিপ্রাকৃত আত্মার ভূমিকা ছিল। এটি হয়তো সেই আত্মা, যে আলবাট্রস পাখির সাথে সংযুক্ত ছিল এবং যার মৃত্যুর কারণে নাবিক এত কষ্ট পেয়েছিল।
"The Sun, right up above the mast,
Had fixed her to the ocean:
But in a minute she 'gan stir,
With a short uneasy motion—
Backwards and forwards half her length
With a short uneasy motion."
"সূর্য, একেবারে মাস্তুলের উপরে,
জাহাজকে মহাসাগরে স্থির করে রেখেছিল;
কিন্তু এক মিনিটের মধ্যেই জাহাজ নড়েচড়ে উঠল,
একটি ছোট অস্থির কম্পনের সাথে—
এগিয়ে-পেছনে অর্ধেক দৈর্ঘ্য জুড়ে
অস্থিরভাবে দুলতে লাগল।"
জাহাজ প্রথমে স্থির হয়ে ছিল, কিন্তু হঠাৎ তা কাঁপতে শুরু করল। এটি হয়তো আত্মার প্রস্থানের ইঙ্গিত দেয়, কারণ তার কাজ শেষ হয়েছে।
"Then like a pawing horse let go,
She made a sudden bound:
It flung the blood into my head,
And I fell down in a swound."
"তারপর যেন লাগাম খুলে দেওয়া কোনো ঘোড়ার মতো,
জাহাজ হঠাৎ লাফিয়ে উঠল;
এতে আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল,
এবং আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম।"
জাহাজের আচরণ হঠাৎ বদলে যায়। এটি এমনভাবে লাফিয়ে ওঠে, যেন এটি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। নাবিক এতটাই হতবুদ্ধি হয়ে যায় যে, তার মাথায় রক্তের প্রবাহ বেড়ে গিয়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এটি এক ধরনের চরম উত্তেজনার মুহূর্ত।
"How long in that same fit I lay,
I have not to declare;
But ere my living life returned,
I heard and in my soul discerned
Two voices in the air."
"আমি কতক্ষণ এই অচেতন অবস্থায় ছিলাম,
তা বলার মতো কিছু নেই;
কিন্তু আমার জীবনীশক্তি ফিরে আসার আগেই,
আমি শুনলাম এবং অনুভব করলাম
বাতাসে ভেসে আসা দুই কণ্ঠস্বর।"
নাবিক জানে না সে কতক্ষণ অজ্ঞান ছিল, তবে সে তার চারপাশের বাস্তবতাকে ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করে। এরপর সে দুটি রহস্যময় কণ্ঠস্বর শুনতে পায়, যা হয়তো অতিপ্রাকৃত কোনো শক্তির ইঙ্গিত দেয়।
"'Is it he?' quoth one, 'Is this the man?
By him who died on cross,
With his cruel bow he laid full low
The harmless Albatross."
"'এ কি সেই লোক?' এক কণ্ঠস্বর জিজ্ঞেস করল, 'এ কি সেই ব্যক্তি?
যিনি সেইজনের নামে শপথ করেছেন, যিনি ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন,
যে তার নিষ্ঠুর তীর দিয়ে হত্যা করেছিল
নিরীহ আলবাট্রসকে।'"
প্রথম কণ্ঠস্বরটি নিশ্চিত হতে চায় যে, তারা সেই ব্যক্তির (নাবিক) কথাই বলছে কিনা, যে নিজের নিষ্ঠুরতার কারণে নিরীহ আলবাট্রসকে হত্যা করেছিল। তারা যিশুখ্রিস্টের নাম উল্লেখ করছে, যা বোঝায় যে এটি নৈতিক বা আধ্যাত্মিক বিচারের মুহূর্ত হতে পারে।
"The spirit who bideth by himself
In the land of mist and snow,
He loved the bird that loved the man
Who shot him with his bow.'"
"সে আত্মা, যে একাকী বসবাস করে
কুয়াশা ও তুষারের দেশে,
সে ভালোবাসত সেই পাখিকে, যে ভালোবাসত মানুষকে,
যে কিনা তাকে (আলবাট্রসকে) তার তীর দিয়ে হত্যা করেছিল।"
এই লাইনগুলো আলবাট্রসের প্রতি প্রকৃতির দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরে। একটি অতিপ্রাকৃত আত্মা, যে তুষারময় অঞ্চলে থাকে, সে আলবাট্রসকে ভালোবাসত। কিন্তু যে মানুষটিকে আলবাট্রস ভালোবাসত, সেই মানুষই (নাবিক) তাকে হত্যা করেছিল। এটি প্রকৃতির প্রতি মানুষের নিষ্ঠুরতার প্রতিফলন।
"The other was a softer voice,
As soft as honey-dew:
Quoth he, 'The man hath penance done,
And penance more will do.'"
"অন্য কণ্ঠস্বরটি ছিল আরও কোমল,
মধুর শিশিরের মতো নরম;
সে বলল, 'এই মানুষ অনুশোচনা করেছে,
এবং আরও অনুশোচনা করতে হবে।'"
দ্বিতীয় কণ্ঠস্বরটি প্রথমটির তুলনায় কোমল এবং সহানুভূতিশীল। এটি বলে যে, নাবিক ইতিমধ্যেই তার কৃতকর্মের জন্য কিছুটা অনুশোচনা করেছে, তবে তাকে আরও অনুশোচনা করতে হবে। এটি বোঝায় যে, তার শাস্তি এখনও শেষ হয়নি।
PART VI
"But tell me, tell me! speak again,
Thy soft response renewing—
What makes that ship drive on so fast?
What is the ocean doing?"
বাংলা অনুবাদ:
"কিন্তু বলো, বলো! আবার বলো,
তোমার কোমল কণ্ঠস্বর শোনাও—
কি কারণে এই জাহাজ এত দ্রুত ছুটে চলছে?
সাগরই বা কি করছে?"
ব্যাখ্যা:
প্রথম কণ্ঠস্বরটি জানতে চায়, কীভাবে জাহাজ বাতাস বা ঢেউ ছাড়াই এত দ্রুত চলছে। এটি এমন এক অলৌকিক ঘটনার ইঙ্গিত দেয়, যা স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে।
"Still as a slave before his lord,
The ocean hath no blast;
His great bright eye most silently
Up to the Moon is cast—"
বাংলা অনুবাদ:
"যেমন দাস তার প্রভুর সামনে নত,
সাগরও স্থির হয়ে আছে;
তার বিশাল উজ্জ্বল চোখ চুপচাপ
চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে—"
ব্যাখ্যা:
দ্বিতীয় কণ্ঠস্বর উত্তর দেয় যে, সমুদ্র দাসের মতো স্থির হয়ে আছে এবং বাতাসের কোনো প্রবাহ নেই। সমুদ্র যেন চাঁদের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে।
"If he may know which way to go;
For she guides him smooth or grim.
See, brother, see! how graciously
She looketh down on him."
বাংলা অনুবাদ:
"যদি সে জানতে পারে কোন দিকে যেতে হবে;
কারণ চাঁদই তাকে শান্তভাবে বা তীব্রভাবে চালিত করে।
দেখো ভাই, দেখো! কত দয়া নিয়ে
সে (চাঁদ) তার দিকে তাকিয়ে আছে।"
ব্যাখ্যা:
এখানে বলা হয়েছে, চাঁদ জাহাজের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করছে, যা প্রকৃতির এক অলৌকিক ক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়।
"But why drives on that ship so fast,
Without or wave or wind?"
বাংলা অনুবাদ:
"কিন্তু কেন এই জাহাজ এত দ্রুত ছুটে চলেছে,
যেখানে না আছে ঢেউ, না আছে বাতাস?"
ব্যাখ্যা:
প্রথম কণ্ঠস্বর বিস্মিত হয়ে আবার প্রশ্ন করে, কারণ বাতাস বা ঢেউ ছাড়া জাহাজের এমন চলা স্বাভাবিক নয়।
"The air is cut away before,
And closes from behind.
বাংলা অনুবাদ:
"বাতাস সামনে কেটে যাচ্ছে,
এবং পিছন থেকে আবার মিলছে।"
ব্যাখ্যা:
দ্বিতীয় কণ্ঠস্বর বোঝাচ্ছে যে, বাতাস এমনভাবে কাজ করছে যেন এটি জাহাজের সামনে কেটে গিয়ে পিছন থেকে আবার একত্রিত হচ্ছে, যা অলৌকিক কিছু।
"Fly, brother, fly! more high, more high!
Or we shall be belated:
For slow and slow that ship will go,
When the Mariner's trance is abated."
বাংলা অনুবাদ:
"উড়ে যাও ভাই, উড়ে যাও! আরও ওপরে, আরও ওপরে!
না হলে আমরা দেরি করে ফেলবো:
কারণ জাহাজ ধীরে ধীরে চলতে শুরু করবে,
যখন নাবিকের সম্মোহন কেটে যাবে।"
ব্যাখ্যা:
এটি ইঙ্গিত দেয় যে, জাহাজের অস্বাভাবিক গতি আসলে কোনো অলৌকিক শক্তির কারণে হচ্ছে, এবং এটি ধীরে ধীরে কমে যাবে।
"I woke, and we were sailing on
As in a gentle weather:
'Twas night, calm night, the moon was high;
The dead men stood together."
বাংলা অনুবাদ:
"আমি জেগে উঠলাম, এবং আমরা ধীরে ধীরে এগোচ্ছিলাম
যেন মৃদু আবহাওয়ায়।
এটি ছিল এক শান্ত রাত্রি, চাঁদ ছিল উপরে;
মৃত নাবিকরা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল।"
ব্যাখ্যা:
নাবিক যখন জেগে ওঠে, তখন সে দেখে যে সব মৃত নাবিকরা ডেকে দাঁড়িয়ে আছে, যা এক ভৌতিক দৃশ্যের সৃষ্টি করে।
"Oh! dream of joy! is this indeed
The light-house top I see?
Is this the hill? is this the kirk?
Is this mine own countree?"
বাংলা অনুবাদ:
"ওহ! আনন্দের স্বপ্ন! এটি কি সত্যিই
বাতিঘরের চূড়া যা আমি দেখছি?
এটি কি পাহাড়? এটি কি গির্জা?
এটি কি আমার নিজের দেশ?"
ব্যাখ্যা:
নাবিক তার পরিচিত স্থানগুলোর চিহ্ন দেখে উচ্ছ্বসিত হয়। এটি তার দীর্ঘ কষ্টের পর স্বস্তির অনুভূতি প্রকাশ করে।
"Each corse lay flat, lifeless and flat,
And, by the holy rood!
A man all light, a seraph-man,
On every corse there stood."
বাংলা অনুবাদ:
"প্রত্যেক মৃতদেহ শুয়ে ছিল, নিথর এবং নিষ্প্রাণ,
আর, পবিত্র ক্রুশের শপথ!
একটি আলোকিত মানুষ, এক দেবদূতের মতো,
প্রত্যেক মৃতদেহের ওপরে দাঁড়িয়ে ছিল।"
ব্যাখ্যা:
এখানে বলা হয়েছে, প্রতিটি মৃতদেহের ওপরে এক স্বর্গীয় আত্মা দাঁড়িয়ে ছিল, যা হয়তো তাদের মুক্তির প্রতীক।
"But soon I heard the dash of oars,
I heard the Pilot's cheer;
My head was turned perforce away
And I saw a boat appear."
বাংলা অনুবাদ:
"কিন্তু শিগগিরই আমি শুনলাম বৈঠার ছলাৎছল শব্দ,
আমি শুনলাম পাইলটের আনন্দধ্বনি;
আমার মাথা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘুরে গেল,
আমি দেখলাম একটি নৌকা এসে পড়েছে।"
ব্যাখ্যা:
নাবিক দেখতে পায় যে, একটি নৌকা তার দিকে আসছে, যেখানে পাইলট এবং তার ছেলে রয়েছে। এটি তার জন্য পরিত্রাণের ইঙ্গিত দেয়।
"He'll shrieve my soul, he'll wash away
The Albatross's blood."
বাংলা অনুবাদ:
"সে আমার আত্মাকে মুক্ত করবে,
সে আলবাট্রসের রক্তের দায় মুছে দেবে।"
ব্যাখ্যা:
সন্ন্যাসী নাবিকের পাপ মুক্তি দেবে বলে আশা করা হয়, যা তার জন্য পরিত্রাণের শেষ ধাপ হতে পারে।
PART VII
"This Hermit good lives in that wood
Which slopes down to the sea.
How loudly his sweet voice he rears!
He loves to talk with marineres
That come from a far countree."
বাংলা অনুবাদ:
"এই সৎ সাধু থাকেন সেই অরণ্যে,
যেটি ঢালু হয়ে নেমে গেছে সমুদ্রের দিকে।
কী জোরে তিনি তার মধুর কণ্ঠ তোলেন!
তিনি ভালোবাসেন নাবিকদের সাথে কথা বলতে,
যারা দূরদেশ থেকে আসে।"
ব্যাখ্যা:
এই অংশে বলা হয়েছে যে এক সাধু ব্যক্তি থাকেন সমুদ্রের কাছের এক বনে। তিনি সাগর থেকে আগত নাবিকদের গল্প শুনতে ভালোবাসেন।
"He kneels at morn, and noon, and eve—
He hath a cushion plump:
It is the moss that wholly hides
The rotted old oak-stump."
বাংলা অনুবাদ:
"তিনি প্রভাত, দুপুর, এবং সন্ধ্যায় প্রার্থনায় নত হন—
তার আছে এক নরম আসন:
যা আসলে শ্যাওলায় ঢাকা
এক পচা ওক গাছের গুঁড়ি।"
ব্যাখ্যা:
সাধু একজন ধার্মিক ব্যক্তি, যিনি দিনে তিনবার প্রার্থনা করেন। তার আসনটি এক পুরোনো পচা গাছের গুঁড়ি, যা শ্যাওলায় ঢাকা।
"The skiff-boat neared: I heard them talk,
'Why, this is strange, I trow!
Where are those lights so many and fair,
That signal made but now?'"
বাংলা অনুবাদ:
"ছোট নৌকাটি কাছে এলো: আমি শুনলাম তাদের কথা,
'আরে, এটি তো অদ্ভুত ব্যাপার!
কোথায় গেল সেই অসংখ্য সুন্দর আলো,
যা কিছুক্ষণ আগে সংকেত দিচ্ছিল?'"
ব্যাখ্যা:
পাইলট ও সাধু যখন জাহাজের কাছে আসে, তখন তারা অবাক হয়ে দেখে যে আগের আলো আর নেই। এটি অলৌকিক কিছু ঘটনার ইঙ্গিত দেয়।
"'Strange, by my faith!' the Hermit said—
'And they answered not our cheer!
The planks looked warped! and see those sails,
How thin they are and sere!
I never saw aught like to them,
Unless perchance it were..."
বাংলা অনুবাদ:
"'অদ্ভুত! সত্যিই অদ্ভুত!' সাধু বললেন—
'এরা আমাদের অভিবাদনের জবাব দিল না!
তক্তাগুলো বাঁকাচোরা দেখাচ্ছে! আর দেখো ওই পালগুলো,
কী পাতলা, কী শুষ্ক!
আমি এমন কিছু আগে কখনো দেখিনি,
সর্বোচ্চ যা মনে পড়তে পারে..."
ব্যাখ্যা:
সাধু বুঝতে পারেন যে জাহাজটি অস্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে—এর কাঠামো নড়বড়ে এবং পাল শুষ্ক হয়ে গেছে, যা সাধারণ জাহাজের মতো নয়।
"Under the water it rumbled on,
Still louder and more dread:
It reached the ship, it split the bay;
The ship went down like lead."
বাংলা অনুবাদ:
"জলের নিচে এক গম্ভীর গর্জন হলো,
যা ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল:
এটি জাহাজ পর্যন্ত পৌঁছে, উপসাগর দ্বিখণ্ডিত করল;
আর জাহাজ সীসার মতো তলিয়ে গেল।"
ব্যাখ্যা:
একটি ভয়ঙ্কর শব্দ শোনা গেল, যা সমুদ্রকে দ্বিখণ্ডিত করে দিল এবং জাহাজকে নিমজ্জিত করল। এটি এক অলৌকিক ঘটনা, যা প্রকৃতির সাধারণ নিয়মের বাইরে।
"Since then, at an uncertain hour,
That agony returns:
And till my ghastly tale is told,
This heart within me burns."
বাংলা অনুবাদ:
"তখন থেকে, যে কোনো অজানা মুহূর্তে,
সে যন্ত্রণা আবার ফিরে আসে:
এবং যতক্ষণ না আমি আমার ভয়ংকর গল্প বলি,
আমার হৃদয় দগ্ধ হতে থাকে।"
ব্যাখ্যা:
নাবিক এখন এক অভিশাপে আক্রান্ত—যতক্ষণ না সে তার কাহিনি অন্য কাউকে শোনায়, তার আত্মা শান্তি পায় না।
"He prayeth well, who loveth well
Both man and bird and beast.
He prayeth best, who loveth best
All things both great and small;"
বাংলা অনুবাদ:
"সে-ই ভালো প্রার্থনা করে, যে ভালোবাসে,
মানুষ, পাখি ও পশুকে।
সে-ই সর্বোত্তম প্রার্থনা করে, যে ভালোবাসে,
সবকিছু—বড় হোক বা ছোট।"
ব্যাখ্যা:
এটি কবিতার মূল শিক্ষা—সত্যিকারের প্রার্থনা কেবলমাত্র ধার্মিক আচরণে নয়, বরং সকল সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসার মধ্যেই নিহিত।
"A sadder and a wiser man,
He rose the morrow morn."
বাংলা অনুবাদ:
"একজন দুঃখী কিন্তু জ্ঞানী মানুষ হয়ে,
সে পরদিন সকালে উঠে দাঁড়ালো।"
ব্যাখ্যা:
কবিতার শেষে, বিয়ের অতিথি, যিনি এই গল্প শুনেছিলেন, তিনি মানসিকভাবে বদলে যান। তিনি আগের চেয়ে বেশি জ্ঞানী ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠেন।
"The Rime of the Ancient Mariner" কবিতায় এক অভিশপ্ত নাবিকের গল্প বলা হয়েছে, যিনি একটি নিরীহ আলবাট্রসকে হত্যা করেছিলেন। এর ফলে প্রকৃতি এবং অতিপ্রাকৃত শক্তির ক্রোধের শিকার হয়ে তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। শেষে, তিনি বুঝতে পারেন যে প্রকৃত ভালোবাসা এবং সমবেদনাই প্রকৃত ক্ষমার পথ।