অ্যাডেলাইন ভার্জিনিয়া উলফ একজন ইংরেজ লেখিকা ছিলেন। তিনি ২০শ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আধুনিকতাবাদী লেখক হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি স্ট্রিম অফ কনশাসনেসকে একটি বর্ণনামূলক উপকরণ হিসেবে ব্যবহারের পথিকৃৎ ছিলেন। উলফ লন্ডনের সাউথ কেনসিংটনের একটি ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। উইকিপিডিয়া
জন্ম: ২৫ জানুয়ারি ১৮৮২, কেনসিংটন, লন্ডন, যুক্তরাজ্য
মৃত্যু: ২৮ মার্চ ১৯৪১ (বয়স ৫৯ বছর), রিভার উস, যুক্তরাজ্য
প্রভাবিত করেছেন: উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, এমিলি ব্রন্টি
Complete Title: Shakespeare’s Sister.
Date of Composition: 1928.
Place Written: Cambridge, England.
First Published: October 24, 1929.
Literary Period: Modernism, Feminism.
Genre: Feminist essay.
Setting: The narrator describes a specific day at a fictional university, Oxbridge, inspired by the university setting of Oxford and Cambridge, with its quadrangles and impassable lawns.
Narrative Perspective: Woolf addresses the audience directly as herself but occasionally shifts to a first-person narrator to recount the events leading up to the lecture.
Introduction of shakespeare's sister
"শেক্সপিয়ারের বোন" ভার্জিনিয়া উলফের প্রবন্ধ, যা তাঁর বই "A Room of One's Own," থেকে নেওয়া হয়েছে, একটি কাল্পনিক চিত্রায়ন যেখানে কল্পনা করা হয়েছে যে যদি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের একটি বোন থাকত, যার সাহিত্যিক প্রতিভা তার সমান হতো, তবে কী ঘটতে পারত। এই প্রবন্ধটি দেখায় কিভাবে সমাজের বিধিনিষেধ এবং সুযোগের অভাব তাকে তার ভাইয়ের মতো স্বীকৃতি অর্জন করতে বাধা দিত, শুধুমাত্র তার লিঙ্গের কারণে। এলিজাবেথীয় ইংল্যান্ডে নারীদের সৃজনশীল প্রকাশ এবং বৌদ্ধিক প্রচেষ্টার ওপর আরোপিত ঐতিহাসিক সীমাবদ্ধতাকে সমালোচনা করার জন্য উলফ এই কল্পিত পরিস্থিতি ব্যবহার করেছেন।
মহিলারা সাহিত্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে এতটাই উপেক্ষিত ছিলেন। ভার্জিনিয়া উলফের সময়ের আগে তারা লেখক হিসেবে সাহিত্য জগতে প্রবেশের সুযোগই পাননি। ভার্জিনিয়া উলফ (১৮৮২-১৯৪১) এই মহিলাদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরার জন্য শেক্সপিয়ারের একটি কল্পিত বোনের গল্প সৃষ্টি করেছিলেন। এই বোনের নাম ছিল জুডিথ (মূলত, শেক্সপিয়ারের কন্যার নাম ছিল জুডিথ)। ভার্জিনিয়া উলফ ছিলেন একজন ছোটগল্পকার, নারীবাদী, সমাজবিজ্ঞানী এবং সাহিত্য সমালোচক।Shakespeare’s Sister একটি প্রভাবশালী প্রবন্ধ। এখানে শুধু সাহিত্য রচনাতেই নয়, বরং সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকেও মহিলারা কীভাবে পিছিয়ে পড়েছিলেন, তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
Shakespeare's sister Bangla Summary
১. এলিজাবেথীয় যুগে পুরুষরা এত উন্নত হলেও মহিলারা কেন সাহিত্যে পিছিয়ে ছিল?
২. শেক্সপিয়ারের একটি কল্পিত বোনের মাধ্যমে গল্প বলা হয়েছে। (শেক্সপিয়ার যদি সত্যিই বোন থাকত, তাহলে তার ভাগ্যে কী ঘটত, তা দেখানো হয়েছে।)
ভার্জিনিয়া উলফ দেখিয়েছেন যে এলিজাবেথীয় যুগে সাহিত্য রচনায় পুরুষরা শীর্ষস্থান দখল করেছিল। এমনকি যেসব পুরুষ তাদের জীবনে কখনও সাহিত্য লেখেননি, তারাও অন্তত একবার হলেও কবিতা লিখেছিলেন। ওই সময় বহু খ্যাতনামা সাহিত্যিক সাহিত্যকে শাসন করছিলেন। তবে তারা সবাই ছিলেন পুরুষ। তাহলে এলিজাবেথীয় যুগে নারীদের সাহিত্য নেই কেন? তারা কি কখনও সাহিত্য রচনা করেননি? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের ওই সময় নারীদের পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাহিত্যিক অবস্থান সম্পর্কে জানতে হবে।
রানি এলিজাবেথ নিজেই ইংল্যান্ডের সমগ্র শাসনভার পরিচালনা করছিলেন, যদিও তিনি একজন নারী ছিলেন। তিনি সাহিত্যেরও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এজন্য তার শাসনকালকে ইংরেজি সাহিত্যের স্বর্ণযুগ বলা হয়। কিন্তু রানি এলিজাবেথ নারী হয়েও সমাজে নারীদের উন্নতির জন্য কিছুই করেননি। বরং সর্বত্র পুরুষ সাহিত্যিকরাই আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন।
সামাজিক কাঠামোতে তখন নারীদের অবস্থান নিম্নস্তরে রাখা হতো—
ঈশ্বর
পুরুষ
নারী
এলিজাবেথীয় যুগে সাহিত্যে নারীদের খুবই মহিমান্বিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাদের খুব বুদ্ধিমান এবং সাহিত্যের প্রধান চরিত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু তখন তাদের কোনো সাহিত্যকর্মকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে তারা পুরুষদের ছদ্মনামে সাহিত্য প্রকাশ করতেন। যেমন— জর্জ এলিয়ট, রবার্ট গ্যালব্রেইথ, ব্রন্টি ভগ্নীরা (ক্যুরার বেল)। তারা সাহিত্য রচনায় উৎসাহিত হলেও পরিবার তাদের এই কাজে বাধা দিত। যদি কোনো নারী সাহিত্য লিখতেন, তাহলে পুরুষ লেখকরা তাকে কঠোর সমালোচনার মুখে ফেলত। সবচেয়ে খারাপ সমালোচক ছিলেন অস্কার ব্রাউনিং। তিনি বলেছিলেন—
"The most intelligent of women is inferior to the least intelligent of men."
(অর্থাৎ, সবচেয়ে বুদ্ধিমান নারীও সবচেয়ে অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন পুরুষের চেয়ে নিকৃষ্ট।)
অর্থাৎ, সাহিত্যে নারীদের উচ্চ মর্যাদায় দেখানো হলেও, বাস্তব জীবনে তাদের অবস্থান ছিল অত্যন্ত নিম্ন। যে সাহিত্যিক তার লেখায় নারীদের প্রশংসা করতেন, তিনিই বাস্তবে তাদের শাসন করতেন ও অবমূল্যায়ন করতেন।
ওই সময় নারীদের পারিবারিক অবস্থান ছিল অত্যন্ত দুর্বল। ছেলেদের স্কুলে পাঠানো হতো, কিন্তু মেয়েদের প্রতারিত করে ঘরে আটকে রাখা হতো। রাজপরিবার ব্যতীত কাউকে বই পড়তে দেওয়া হতো না। এমনকি অল্প বয়সেই তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো। তারপরও যদি কোনো মেয়ে পরিবারের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সাহিত্য পড়তে চাইত, তাহলে তাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হতো।
এই প্রবন্ধে শেক্সপিয়ারের কল্পিত বোনের মাধ্যমে নারীদের পারিবারিক দুর্দশা দেখানো হয়েছে।
যদি শেক্সপিয়ারের বোন থাকত, তাহলে সে কেমন হত?
সে কি শেক্সপিয়ারের মতো লেখক হতে পারত?
সে কি শেক্সপিয়ারের মতো পড়াশোনার সুযোগ পেত?
সে কি শেক্সপিয়ারের মতো স্বাধীনতা পেত?
না, কখনোই না!
অর্থাৎ, এলিজাবেথীয় যুগের সমস্ত নারীকেই শেক্সপিয়ারের বোন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এলিজাবেথীয় সমাজে নারীরা চরমভাবে অবহেলিত ছিল। তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হতো। তাদের লেখা পড়া হতো না। ফলে তাদের অনেক সাহিত্যকর্ম অপ্রকাশিত থেকে যেত এবং কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেত। অর্থাৎ, কোনো নারী যদি সাহিত্যে কিছু লিখেও ফেলত, তাহলে সে জানত যে এটি কখনোই সমাজে স্বীকৃতি পাবে না। এটি কখনোই প্রকাশিত হবে না। ফলে নারীদের সাহিত্যচর্চা সীমাবদ্ধ ছিল তাদের ডায়েরির পাতায়।
আবার, সমাজের মানুষ তাদের প্রতি কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করত। সমালোচকরা তাদেরকে সমাজের নিম্নতম শ্রেণির প্রাণী হিসেবে ব্যাখ্যা করত। এতে নারীরা সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলত।
রানি এলিজাবেথ নিজেই এলিজাবেথীয় যুগে একজন শক্তিশালী শাসক ছিলেন। কিন্তু তার বাইরে আর কোনো নারী রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারেননি। তারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদেও অবস্থান করতে পারেননি। সমস্ত নারী ছিল গৃহবন্দি। পুরো রাষ্ট্রই ছিল নারীদের জন্য একপ্রকার উন্মুক্ত কারাগার। সাহিত্যে নারীদের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখানো হলেও বাস্তব সমাজে এর চিত্র ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। নারীদের কোনো ক্ষমতায়ন ছিল না।
ওই সময় নারীদের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। পুরুষরা চাইলে বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম লিখে অর্থ উপার্জন করতে পারত। যদি তারা মন খারাপ করত, তাহলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারত। অনেক কিছু দেখে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারত। কিন্তু নারীদের সেই সুযোগ ছিল না।
যদি কোনো নারী সাহিত্য রচনা করত এবং সেটি খারাপ সমালোচনার মুখে পড়ত, তবে দুঃখ বা হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তারা কোথাও যেতে পারত না। তাদের জন্য কোনো চাকরির সুযোগ ছিল না, ব্যবসারও কোনো সম্ভাবনা ছিল না। তবে কেউ যদি থিয়েটারে কাজ করতে চাইত, তাহলে তাকে নানা ধরনের শারীরিক হয়রানির শিকার হতে হতো।
Shakespeare’s Sister-এ শেক্সপিয়ারের কল্পিত বোনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে দেখা যায়, সে থিয়েটারে কাজ করতে গিয়ে এক থিয়েটার ম্যানেজারের দ্বারা গর্ভবতী হয় এবং শেষে আত্মহত্যা করে।
(শেক্সপিয়ার তার কল্পিত চরিত্রের মাধ্যমে দেখিয়েছেন, যদি তার বোন থাকত, তাহলে তার ভাগ্যে কী ঘটত।)
এই বোন জন্মগতভাবে তার ভাইয়ের মতো প্রতিভাবান ছিল। কিন্তু তার বাবা-মা তাকে ভাইয়ের সঙ্গে ব্যাকরণ স্কুলে যেতে দেননি। তাকে ওভিড, ভার্জিল, ও হোরাসের কবিতা পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। যখন সে তার ভাইয়ের লাইব্রেরি থেকে কয়েকটি পৃষ্ঠা পড়তে চাইত, তখন তার বাবা-মা তাকে মোজা সেলাই করতে বলত কিংবা রান্নার কাজ করতে দিত। তারা তাকে বই-পত্র না ঘাঁটানোর কঠোর নির্দেশ দিত।
সম্ভবত সে চিলেকোঠায় বসে কিছু সাহিত্য লিখত। তারপর সেগুলো লুকিয়ে রাখত, যাতে সেগুলো আগুনে না পোড়ে যায়। কৈশোর পেরোনোর আগেই তাকে এক পার্শ্ববর্তী পশম ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যদি সে আপত্তি করত, তবে তাকে গির্জার সেবিকা (নান) হিসেবে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হতো।
কিন্তু তার সাহিত্য প্রতিভার শক্তি তাকে বাড়ি থেকে পালাতে উদ্বুদ্ধ করল। এক গ্রীষ্মের রাতে সে লন্ডনের রাস্তায় হাঁটছিল। তখন তার বয়স মাত্র ১৭ বছর, আর তার কণ্ঠ ছিল পাখির গানের মতো সুরেলা। তার ভাইয়ের মতোই সে ছিল কাব্যিক প্রতিভাধর এবং নাটকের প্রতি আগ্রহী।
সে বিভিন্ন থিয়েটারের দরজায় গিয়ে বলল, সে অভিনয় করতে চায়। পুরুষেরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করল। এক থিয়েটার ম্যানেজার, নিক গ্রিন, তার অভিনয়ে আগ্রহ দেখে হেসে বলল যে, "নারীর অভিনয় মানে পুতুলের মতো নাচানো।"
কিন্তু নিক গ্রিন তার প্রতি সহানুভূতিশীল হলো, কারণ সে ছিল তরুণী। তবে সে সুযোগের অপেক্ষায় রইল এবং একসময় জুডিথকে গর্ভবতী করল। তারপর লজ্জায় জুডিথ আত্মহত্যা করল।
ষোড়শ শতকের সমাজ, যেখানে শেক্সপিয়ার বসবাস করতেন, সেটি নারীদের সাহিত্যিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতি মোটেও সদয় ছিল না। বরং তা ছিল নারীবিরোধী ও শত্রুভাবাপন্ন। আইন ও প্রথার সমস্ত শক্তি একত্রিত হয়ে সে সময় নারীদের প্রতিভাকে দমন করেছিল।
নারীদের তখন শিক্ষার অধিকার ছিল না। তাই একজন মহিলা লেখিকা, জেন অস্টেন, প্রচণ্ড সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়েছিলেন। কোনো অত্যন্ত প্রতিভাবান মেয়ে, যে কবিতার প্রতি নিজের প্রতিভা দেখাতে চাইত, তাকেও বাধাগ্রস্ত করা হতো।
এই প্রবন্ধটিকে একটি নারীবাদী প্রবন্ধ হিসেবে গণ্য করা হয়। ভার্জিনিয়া উলফ ছিলেন প্রথম দিকের সেই নারীদের একজন, যিনি সাহিত্যে নারীদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। সমাজ বিভিন্ন বিধিনিষেধের মাধ্যমে সাহিত্য ও বাস্তব জীবনে নারীদের দমিয়ে রেখেছিল।
যদি শেক্সপিয়ারের একই প্রতিভা ও দুঃসাহসিক মনোভাবসম্পন্ন কোনো বোন থাকত, তবে তার বাবা-মা ও সমাজ তাকে নিশ্চুপ করিয়ে দিত। যখন সে থিয়েটারের জগতে প্রবেশের জন্য বাড়ি ছেড়েছিল, তখন তাকে উপহাস করা হয়েছিল।
জেন অস্টেন, জর্জ এলিয়ট এবং ব্রন্টি বোনদের জীবনই এর প্রমাণ। সাহিত্য প্রকাশ করতে হতো পুরুষের ছদ্মনামে। এমনকি যখন কোনো নারী (যেমন শেক্সপিয়ারের কল্পিত বোন জুডিথ) এই প্রচলিত নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করেছিল, তখন তাকে নিজের জীবন দিতে হয়েছে।
তাই শেষমেশ, ভার্জিনিয়া উলফ বলেছিলেন—একজন লেখকের নিজের প্রতিভা প্রকাশের জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রয়োজন।