উইস্টান হিউ অডেন (Wystan Hugh Auden) ছিলেন একজন ব্রিটিশ-আমেরিকান কবি। তাঁর কবিতা শৈল্পিক ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার জন্য প্রসিদ্ধ, পাশাপাশি এটি রাজনীতি, নৈতিকতা, প্রেম, ধর্ম ইত্যাদির প্রতি গভীর মনোযোগ প্রদান করে। তাঁর রচনায় স্বরের বৈচিত্র্য, ছন্দ ও বিন্যাসের বহুমুখিতা লক্ষ্য করা যায়।
জন্ম: ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৭; ইয়র্ক, যুক্তরাজ্য
মৃত্যু: ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩ (বয়স ৬৬); ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া
সম্পূর্ণ নাম: উইস্টান হিউ অডেন
প্রভাবিত করেছেন: টি. এস. এলিয়ট, ক্রিস্টোফার ইশারউড, জন ডান প্রভৃতি
এই কবিতায়, অডেন ইয়েটসের উজ্জ্বল সাহিত্যিক প্রতিভা এবং তার কিছু “মূর্খ” বা অবাস্তব চিন্তার দ্বৈততা মূল্যায়ন করেন। তিনি আরও বিস্তৃতভাবে কবিদের সামাজিক দায়িত্ব এবং কঠিন সময়ে, বিশেষ করে ভয়াবহ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, তাদের ভূমিকা নিয়ে চিন্তা করেন। কবিতাটি ১৯৩৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ইয়েটসের মৃত্যুর এক মাস পর লেখা হয় এবং এটি অডেনের কবিতার সংকলন Another Time (১৯৪০)-এ প্রকাশিত হয়।
অডেন কবিতায় একটি বিতর্কিত বক্তব্য প্রদান করেন—“poetry makes nothing happen”—অর্থাৎ, কবিতা ইতিহাসে কোনো সরাসরি পরিবর্তন আনে না। তবে, তিনি এটাও বোঝাতে চান যে কবিরা মানব যন্ত্রণাকে রূপান্তরিত করে জ্ঞান ও আনন্দের শিল্পে পরিণত করতে পারেন।
এই কবিতাটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে লেখা হয়েছিল, যখন বিশ্ব ভয়াবহ অস্থিরতার মধ্যে ছিল। কবিতাটি শুধুমাত্র ইয়েটসের স্মৃতিচারণ নয়, বরং সাহিত্য, ইতিহাস ও মানব সভ্যতার প্রতি এক গভীর দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। ২০তম শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ শোকগাথার (elegy) মধ্যে এটি অন্যতম।
ডব্লিউ. বি. ইয়েটস মারা গেলেন এক কঠোর শীতের মাঝে। নদীগুলো বরফে ঢেকে গেল, বিমানবন্দর প্রায় ফাঁকা হয়ে রইল, আর তুষারপাত জনসাধারণের স্মৃতিসৌধগুলোর আকৃতি বিকৃত করে দিল। রাত নেমে আসার সাথে সাথে পারদ থার্মোমিটারের তাপমাত্রা আরও নিচে নেমে গেল। যে কোনো পরিমাপে বিচার করলে, ইয়েটসের মৃত্যুর দিনটি ছিল ঠাণ্ডা ও বিষণ্ন।
তাঁর অসুস্থশয্যা থেকে দূরে, নেকড়েরা দৌড়াচ্ছিল চিরসবুজ গাছে ভরা বনে, আর এক সাধারণ নদী প্রবাহিত হচ্ছিল উজ্জ্বল জলসীমার পাশ দিয়ে, যেন তাদের লোভনীয় প্রলোভন উপেক্ষা করছে। ইয়েটসের শোকার্ত মানুষরা নিশ্চিত করল যে, তাঁর কবিতাগুলো বেঁচে থাকল, যদিও তিনি চলে গেলেন।
কিন্তু ইয়েটসের জন্য, এটি ছিল তাঁর শেষ দিন, হাসপাতালের কর্মীদের পদচারণা ও তাঁর অবনতিশীল স্বাস্থ্যের গুঞ্জনে ভরা এক দিন। তাঁর শরীরের অংশগুলো তাঁর বিরুদ্ধে চলে গেল, আর তাঁর চেতন মনে নেমে এল শূন্যতা, যেন জনশূন্য নগর চত্বর। তাঁর স্নায়ুতন্ত্র ও রক্তসঞ্চালন বন্ধ হয়ে গেল। তিনি শারীরিকভাবে বিদায় নিলেন, কিন্তু পাঠকদের হৃদয়ে থেকে গেলেন চিরকাল।
এখন তাঁর উত্তরাধিকার ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন নগরে। তাঁর কাজ এখন সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষের অনুভূতির কাছে ন্যস্ত। তাঁদের প্রশংসাই হবে তাঁর এক নতুন জীবন, যদিও এটি তাঁর রূপকথার বনভূমি বা জীবনের প্রতীকী অরণ্যের মতো নয়। তবে তিনি কঠোর সমালোচনার মুখোমুখিও হবেন, যা তাঁর নিজের যুগে অচিন্তনীয় ছিল। একজন লেখক মারা গেলে, জীবিত মানুষ তাঁর শব্দগুলোর নতুন অর্থ তৈরি করে।
তবুও, আগামীকালের আত্মগরিমায় ভরা ব্যস্ততায়, যখন শেয়ারবাজারে দালালরা পশুর মতো চিৎকার করবে, যখন গরিবরা তাদের চিরাচরিত সংগ্রামে লিপ্ত থাকবে, যখন পরাধীন মানুষেরা নিজেদের মুক্ত মনে করবে, তখনো কয়েক হাজার ইয়েটস-ভক্ত ফিরে তাকাবে তাঁর মৃত্যুর দিনে, এটিকে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে গণ্য করবে।
যে কোনো পরিমাপে বিচার করলে, ইয়েটসের মৃত্যুর দিনটি ছিল ঠাণ্ডা ও বিষণ্ন।
তুমি আমাদের দুর্বলতাগুলো ভাগ করে নিয়েছিলে, কিন্তু তোমার প্রতিভা সবকিছুকে অতিক্রম করেছে—ধনী নারীদের দান-দক্ষিণা, দেহের অবক্ষয়, এমনকি তোমার নিজস্ব ব্যক্তিত্বকেও। আয়ারল্যান্ডের বিশৃঙ্খলা তোমাকে কবিতা লিখতে প্ররোচিত করেছিল। অথচ তোমার সব লেখা সত্ত্বেও, আয়ারল্যান্ড এখনো বিশৃঙ্খল ও বৈরী আবহাওয়ায় ভরা, কারণ কবিতা আসলে বাস্তবতা বদলাতে পারে না।
এটি টিকে থাকে সেই রূপক অঞ্চলে, যেখান থেকে এটি জন্ম নেয়—এক উর্বর ভূমি, যেখানে ক্ষমতাবানরা কখনো হস্তক্ষেপ করতে চায় না। এটি গলগল করে প্রবাহিত হয়, এক নদীর মতো, নিঃসঙ্গতার মাঠ থেকে, দুঃখের কেন্দ্রবিন্দু থেকে, সেই বেদনাদায়ক অভ্যন্তরীণ স্থানগুলো থেকে যেখানে আমরা আমাদের জীবন উৎসর্গ করি। এটি প্রবাহিত হয়—একটি প্রক্রিয়া হিসেবে—যেমন ভাষা প্রবাহিত হয়, কিংবা নদী সাগরে মেশে।
পৃথিবী, গ্রহণ করো এই অসাধারণ মানুষকে: ডব্লিউ. বি. ইয়েটস এখন চিরশায়িত।
এই অশুভ সময়ের অন্ধকারে, ইউরোপের আগ্রাসীরা একে অপরকে হিংস্র কুকুরের মতো হুমকি দিচ্ছে। প্রতিটি জাতি অপেক্ষা করছে, একে অপরের প্রতি ঘৃণার দেয়াল তুলে।
মানুষের চেহারায় ফুটে উঠছে লজ্জাজনক চিন্তার প্রতিফলন, সহানুভূতির অশ্রু সবার চোখে বরফে পরিণত হয়েছে।
হে কবি, এই অন্ধকার সময়ের গভীরে নেমে যাও। তোমার মুক্ত কণ্ঠে আমাদের বোঝাও, কিভাবে সবকিছুর পরেও আমরা আনন্দ উদযাপন করতে পারি।
সাবধানে তোমার ভাষাকে লালন করো, যেন মানবজাতির উপর ঝুলে থাকা অভিশাপকে তুমি ফলপ্রসূ করে তুলতে পারো। মানবজাতির ব্যর্থতাগুলোকে এমনভাবে কণ্ঠ দাও, যেন তা দুঃখময় হলেও গভীর আবেগময় হয়।
যেখানে আবেগ শুকিয়ে গেছে, সেখানে নতুন স্রোত বইয়ে দাও, যেন তা আবার নিরাময় করতে পারে। স্বাধীন মনগুলোকে শেখাও কিভাবে সময় ও নিয়তির সীমানার মধ্যেও আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়।
" In Memory of W. B Yeats "Line by Line Bangla Summary with Bangla translation :
"He disappeared in the dead of winter:"
সে শীতের কঠিন মুহূর্তে অন্তর্ধান করল।
শীতের নির্মম প্রকৃতির মধ্যে কবির মৃত্যু ঘটেছে, যা এক গভীর শূন্যতার প্রতীক।
"The brooks were frozen, the airports almost deserted,"
ঝর্ণাগুলো জমে গিয়েছিল, বিমানবন্দর ছিল প্রায় জনশূন্য।
প্রকৃতি ও মানবসভ্যতা যেন স্থবির হয়ে পড়েছিল, তার মৃত্যুর প্রতিফলন হিসেবে।
"And snow disfigured the public statues;"
এবং বরফে ঢেকে গিয়েছিল জনসাধারণের মূর্তিগুলো।
প্রতীকীভাবে এটি ইতিহাস ও স্মৃতির উপর প্রকৃতির অমোঘ ক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়।
"The mercury sank in the mouth of the dying day."
বুধধাতু নেমে গিয়েছিল মৃতপ্রায় দিনের মুখে।
তীব্র ঠান্ডার ফলে থার্মোমিটারের পারদ নেমে যাচ্ছিল, যা কবির জীবনের নিঃশেষ হওয়ার প্রতীক।
"What instruments we have agree"
আমাদের হাতে থাকা যন্ত্রগুলো একমত হয়েছে যে
সময় ও আবহাওয়ার পরিমাপক যন্ত্রগুলোও তার মৃত্যুর কঠিন বাস্তবতা নিশ্চিত করছে।
"The day of his death was a dark cold day."
তার মৃত্যুর দিন ছিল এক অন্ধকার, শীতল দিন।
শুধু প্রকৃতি নয়, পুরো পৃথিবী যেন এক বিষাদময় পরিবেশে ঢেকে গিয়েছিল।
তার অসুস্থতা থেকে দূরে
কবির ব্যক্তিগত দুর্ভোগ প্রকৃতির ওপর কোনো প্রভাব ফেলেনি।
নেকড়ে গুলো চিরসবুজ অরণ্যের ভেতর দৌড়ে চলল,
প্রকৃতি আগের মতোই অবিচল, কবির অনুপস্থিতি তার গতি থামায়নি।
গরিব কৃষকের নদী আভিজাত্যপূর্ণ ঘাটগুলোর প্রলোভনে পড়েনি;
সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা অভিজাত সমাজের বিলাসিতার দ্বারা প্রভাবিত হয়নি।
শোকাতুর কণ্ঠস্বর দ্বারা
কবির মৃত্যুর কথা কিছু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সবাই তা অনুভব করেনি।
কবির মৃত্যুর কথা তার কবিতাগুলোর থেকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
তার সৃষ্টি এখনও বেঁচে আছে, তার লেখাগুলো তার মৃত্যুকে অস্বীকার করছে।
কিন্তু তার জন্য এটি ছিল নিজস্ব রূপে শেষ বিকেল।
কবির জীবনের শেষ মুহূর্ত, যেখানে তিনি নিজেকে অনুভব করতে পারছিলেন, কিন্তু সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছিল।
একটি বিকেল, যেখানে ছিল নার্সদের আনাগোনা আর গুঞ্জন।
হাসপাতালের পরিবেশে মৃত্যুর আগমনী সুর বেজে উঠছিল, চারপাশে কেবল ফিসফাস ও চিকিৎসার আয়োজন।
তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিদ্রোহ ঘোষণা করল।
তার শরীর আর তাকে বহন করতে পারছিল না, একে একে সব অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছিল।
তার মনের চত্বর শূন্য হয়ে গিয়েছিল।
তার চিন্তাগুলো ফিকে হয়ে যাচ্ছিল, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছিল।
নীরবতা শহরতলীতে ছড়িয়ে পড়ল।
তার চেতনা নিস্তব্ধতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, ধীরে ধীরে সে অচেতন হয়ে যাচ্ছিল।
তার অনুভূতির স্রোত থেমে গেল; সে রূপ নিল তার গুণমুগ্ধদের মাঝে।
কবি মৃত্যুবরণ করলেন, কিন্তু তার লেখা ও ভাবনাগুলো পাঠকদের মনে চিরকাল বেঁচে থাকবে।
এখন সে শত শহরের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে।
কবির মৃত্যু তাকে শারীরিকভাবে শেষ করলেও, তার চিন্তাধারা ও লেখা বিভিন্ন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে।
এবং সম্পূর্ণভাবে অপরিচিত ভালোবাসার অধীনে চলে গেছে।
নতুন প্রজন্ম, যারা তাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেনি, তারা তার লেখা ও ভাবনাকে নিজেদের মতো করে গ্রহণ করছে।
তার সুখ এখন আরেক ধরনের কাঠের মাঝে খোঁজা হচ্ছে।
কবির অস্তিত্ব এখন তার কবিতার পাতায় (কাগজের কাঠ) সীমাবদ্ধ, যেখানে পাঠকরা তাকে খুঁজে পায়।
এবং অপরিচিত নীতিবোধের শাসনের অধীনে শাস্তি পাচ্ছে।
তার লেখা নতুন সময়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, যা হয়তো তার মূল চিন্তার বিপরীতও হতে পারে।
একজন মৃত মানুষের শব্দাবলি
কবির লেখা মৃত্যু পরবর্তী সময়েও রয়ে গেছে।
জীবিতদের অন্তরে পরিবর্তিত হয়।
পাঠকরা কবির কবিতাকে নিজেদের অনুভূতির আলোকে ব্যাখ্যা করে, ফলে তার চিন্তাগুলো সময়ের সাথে বদলে যায়।
কিন্তু আগামীকালের গুরুত্ব ও কোলাহলের মাঝে
জীবন থেমে থাকে না; আগামী দিন আসবে, এবং পৃথিবী আগের মতোই চলতে থাকবে।
যখন শেয়ার বাজারের দালালরা জন্তুর মতো গর্জন করবে মেঝেতে দাঁড়িয়ে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের বিশৃঙ্খল প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকবে, যেন কিছুই ঘটেনি।
এবং গরিবরা তাদের চেনা দুর্ভোগ নিয়েই থাকবে।
সমাজের নিম্নবিত্তরা প্রতিদিনের মতোই সংগ্রাম করবে, কবির মৃত্যু তাদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আনবে না।
এবং প্রত্যেকে নিজের কল্পনার কারাগারে বন্দি থেকে স্বাধীন বলে বিশ্বাস করবে।
মানুষ মনে করে যে তারা স্বাধীন, কিন্তু বাস্তবে তারা নিজেদের সীমাবদ্ধতার মাঝেই আবদ্ধ থাকে।
কয়েক হাজার মানুষ এই দিনটির কথা ভাববে।
শুধুমাত্র কিছু লোক কবির মৃত্যুকে স্মরণ করবে, কিন্তু বৃহত্তর সমাজে এর খুব একটা প্রভাব থাকবে না।
যেমন কেউ মনে করে, কোনো একদিন সে কিছু একটু ব্যতিক্রমী করেছিল।
কবির মৃত্যু ধীরে ধীরে সাধারণ একটি স্মৃতি হয়ে যাবে, যেমন জীবনের অন্যান্য ঘটনা।
আমাদের হাতে থাকা যন্ত্রগুলো একমত হয়েছে যে
বিজ্ঞান ও বাস্তবতা একই কথা বলে—মৃত্যু অমোঘ।
তার মৃত্যুর দিন ছিল এক অন্ধকার, শীতল দিন।
II
৩৩. You were silly like us; your gift survived it all:
তুমিও আমাদের মতোই সরল ছিলে; তোমার প্রতিভা সবকিছু টিকে গিয়েছিল।
কবি সাধারণ মানুষের মতোই ছিলেন, কিন্তু তাঁর প্রতিভা সব প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে টিকে ছিল।
৩৪. The parish of rich women, physical decay,
ধনী নারীদের এলাকা, শারীরিক জীর্ণতা,
সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণি ও বার্ধক্য—দুটোই ছিল বাস্তবতার অংশ।
৩৫. Yourself. Mad Ireland hurt you into poetry.
তুমি নিজেও। পাগলাটে আয়ারল্যান্ড তোমাকে কবিতার পথে ঠেলে দিয়েছিল।
কবির মাতৃভূমির অস্থিরতা ও ব্যথা তাঁকে কবি হতে বাধ্য করেছিল।
৩৬. Now Ireland has her madness and her weather still,
এখনও আয়ারল্যান্ড তার পাগলামি ও বৈরী আবহাওয়া ধরে রেখেছে।
সময় বদলালেও আয়ারল্যান্ডের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও পরিবেশ অপরিবর্তিত আছে।
৩৭. For poetry makes nothing happen: it survives
কারণ কবিতা কিছুই ঘটায় না: এটি শুধু টিকে থাকে।
কবিতা বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে না, কিন্তু এটি সময়ের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকে।
৩৮. In the valley of its making where executives
যেখানে এটি সৃষ্টি হয়, সেই উপত্যকায়, যেখানে কর্তৃপক্ষের কোনো আগ্রহ নেই।
শাসক বা ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা কবিতার সৃষ্টির জায়গাকে গুরুত্ব দেয় না।
৩৯. Would never want to tamper, flows on south
যেখানে তারা কখনো হস্তক্ষেপ করতে চায় না, এটি দক্ষিণে প্রবাহিত হয়।
কবিতার বিশুদ্ধতা ও স্বতন্ত্র প্রবাহে কেউ বাধা দেয় না।
৪০. From ranches of isolation and the busy griefs,
একাকীত্বের খামার থেকে ও ব্যস্ত দুঃখগুলো থেকে,
কবিতা মানুষের নিঃসঙ্গতা ও দুঃখের ভেতর থেকেই উঠে আসে।
৪১. Raw towns that we believe and die in; it survives,
সেই অপরিপক্ব শহরগুলো যেখানে আমরা বিশ্বাস করি ও মারা যাই; কবিতা টিকে থাকে।
মানুষের জীবনসংগ্রাম ও মৃত্যু থাকলেও কবিতা তার অস্তিত্ব ধরে রাখে।
৪২. A way of happening, a mouth.
এটি একটি ঘটে চলার প্রক্রিয়া, একটি কণ্ঠস্বর।
কবিতা কেবল শিল্প নয়, এটি একটি চলমান প্রকাশ যা মানবজীবনের বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলে।
III
৪৩. Earth, receive an honoured guest:
ও পৃথিবী, এক সম্মানিত অতিথিকে গ্রহণ করো।
কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটসের মৃত্যুতে পৃথিবী যেন তাঁকে সসম্মানে স্থান দেয়।
৪৪. William Yeats is laid to rest.
উইলিয়াম ইয়েটস চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন।
কবির মৃত্যু ও তাঁর শেষ বিশ্রামের প্রতি ইঙ্গিত।
৪৫. Let the Irish vessel lie
আইরিশ তরীটিকে শুয়ে থাকতে দাও।
ইয়েটস ছিলেন আয়ারল্যান্ডের কাব্যিক প্রতীক, এবং এখন তিনি নিস্তব্ধ।
৪৬. Emptied of its poetry.
যে তরী এখন কবিতাশূন্য।
তাঁর মৃত্যুতে আয়ারল্যান্ড যেন তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবির কাব্যসুধা হারিয়েছে।
৪৭. In the nightmare of the dark
অন্ধকারের দুঃস্বপ্নের মধ্যে,
ইউরোপ তখন এক অস্থির ও অন্ধকার সময়ে প্রবেশ করছে।
৪৮. All the dogs of Europe bark,
ইউরোপের সব কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে,
ইউরোপে যুদ্ধ ও বিশৃঙ্খলার প্রতীকী বর্ণনা।
৪৯. And the living nations wait,
এবং জীবিত জাতিগুলো অপেক্ষায় আছে,
বিশ্ববাসী ভবিষ্যতের অস্থিরতার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
৫০. Each sequestered in its hate;
প্রত্যেকে নিজেদের ঘৃণায় বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।
জাতিগুলোর মধ্যে বিভেদ ও পারস্পরিক শত্রুতার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
৫১. Intellectual disgrace
বুদ্ধিবৃত্তিক লজ্জা
মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি থাকা সত্ত্বেও তারা ভুল ও কলহ থেকে মুক্ত হতে পারেনি।
৫২. Stares from every human face,
প্রতিটি মানুষের মুখ থেকে উঁকি দেয়।
মানুষের চেহারায় হতাশা ও লজ্জার ছাপ স্পষ্ট।
৫৩. And the seas of pity lie
এবং করুণার সমুদ্র পড়ে থাকে
দয়ার অনুভূতি থাকলেও তা অব্যক্ত ও নিষ্ক্রিয় রয়ে গেছে।
৫৪. Locked and frozen in each eye.
প্রতিটি চোখের গভীরে বন্ধ ও জমাট বাঁধা অবস্থায়।
সহমর্মিতা অনুভব করলেও মানুষ তা প্রকাশ করতে পারছে না।
৫৫. Follow, poet, follow right
চলো, কবি, অনুসরণ করো ঠিক পথে
কবিকে আহ্বান করা হচ্ছে সত্যের সন্ধানে এগিয়ে যেতে।
৫৬. To the bottom of the night,
রাতের গভীর অতল পর্যন্ত,
তিনি যেন মানবজাতির অন্ধকার দিকের গভীরে প্রবেশ করেন।
৫৭. With your unconstraining voice
তোমার স্বাধীন কণ্ঠস্বর নিয়ে
কবি যেন তাঁর কাব্যিক শক্তির মাধ্যমে মানুষকে জাগ্রত করেন।
৫৮. Still persuade us to rejoice;
এখনও আমাদের আনন্দিত করতে রাজি করাও;
কবিতা যেন অন্ধকারেও আশার আলো দেখায়।
৫৯. With the farming of a verse
একটি কবিতার চাষাবাদ দিয়ে
কবিতা যেন কৃষকের মতো পরিশ্রমী প্রচেষ্টায় সৃষ্টি হয়।
৬০. Make a vineyard of the curse,
অভিশাপকে পরিণত করো এক আঙুরক্ষেতে।
দুঃখ ও দুর্দশা থেকে সৌন্দর্য ও সৃষ্টিশীলতার জন্ম হোক।
৬১. Sing of human unsuccess
মানবজাতির ব্যর্থতা গেয়ে যাও
কবিতার মাধ্যমে মানুষের সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করো।
৬২. In a rapture of distress;
এক গভীর বেদনার উচ্ছ্বাসে।
কবি যেন দুঃখের মধ্যেও সৌন্দর্য ও অনুপ্রেরণা খুঁজে পান।
63. In the deserts of the heart
হৃদয়ের মরুপ্রান্তরে
(অর্থ: অন্তরের শূন্যতা ও কঠিন বাস্তবতার মাঝে)
64. Let the healing fountain start
চলুক আরোগ্যের ঝরনা বয়ে
(অর্থ: হৃদয়ের শুষ্কতা ও দুঃখ দূর হোক, যেন শান্তি ও সুস্থতা ফিরে আসে)
65. In the prison of his days
তার বন্দি দিনগুলোর মাঝে
(অর্থ: জীবন যেখানে সীমাবদ্ধ, সময়ের বাঁধনে আবদ্ধ)
66. Teach the free man how to praise
শিখুক মুক্ত মানুষ কিভাবে প্রশংসা করতে হয়।
(অর্থ: স্বাধীন মানুষ যেন জীবনের সৌন্দর্য ও মহত্ত্বকে উপলব্ধি করতে শেখে)