উইস্টান হিউ অডেন (Wystan Hugh Auden) ছিলেন একজন ব্রিটিশ-আমেরিকান কবি। তাঁর কবিতা শৈল্পিক ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার জন্য প্রসিদ্ধ, পাশাপাশি এটি রাজনীতি, নৈতিকতা, প্রেম, ধর্ম ইত্যাদির প্রতি গভীর মনোযোগ প্রদান করে। তাঁর রচনায় স্বরের বৈচিত্র্য, ছন্দ ও বিন্যাসের বহুমুখিতা লক্ষ্য করা যায়।
জন্ম: ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৭; ইয়র্ক, যুক্তরাজ্য
মৃত্যু: ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩ (বয়স ৬৬); ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া
সম্পূর্ণ নাম: উইস্টান হিউ অডেন
প্রভাবিত করেছেন: টি. এস. এলিয়ট, ক্রিস্টোফার ইশারউড, জন ডান প্রভৃতি
কবিতার বক্তা একটি গ্যালারির ভেতর দিয়ে হাঁটেন, বিভিন্ন চিত্রকর্মের দিকে তাকিয়ে চিন্তাভাবনা করেন এবং লক্ষ্য করেন "মানবিক অবস্থান"—বিশেষ করে দুঃখ-কষ্টের প্রতি মানুষের উদাসীনতা। এটি একটি একফ্রাসিস (ekphrasis) বা শিল্পকর্মের বর্ণনামূলক বিশ্লেষণ—যেখানে কবিতার বক্তা শীতল নিরপেক্ষতায় চিত্রকর্মগুলো ব্যাখ্যা করেন, দেখান কিভাবে ছবির মানুষজন সংকট বা বিপর্যয়ের মধ্যেও নিজেদের দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত থাকে।
বক্তা বিশেষভাবে পিটার ব্র্যুগেল দ্য এল্ডারের (Pieter Brueghel the Elder) আঁকা Landscape with the Fall of Icarus চিত্রকর্মটির ওপর মনোযোগ দেন। এই চিত্রে আইকারাসকে (গ্রিক পুরাণের সেই চরিত্র, যে সূর্যের খুব কাছে উড়ে যাওয়ার কারণে তার ডানা গলে পড়ে যায় এবং সে সমুদ্রে ডুবে যায়) শুধুমাত্র ছবির এক কোণায় দেখা যায়—কেবলমাত্র জল থেকে বেরিয়ে থাকা দুটি পা। এই ছোট্ট বিশদই বুঝিয়ে দেয় কিভাবে একটি বিশাল বিপর্যয়ও মানুষের চোখে তেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে না।
একটি গ্যালারি পরিদর্শন করতে গিয়ে, যেখানে প্রখ্যাত ১৯শ শতাব্দীর পূর্বের চিত্রকরদের কাজ প্রদর্শিত হয়, বক্তা লক্ষ্য করেন যে এই শিল্পীরা দুঃখকষ্ট সঠিকভাবে চিত্রিত করেছেন—বিশেষত মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যের দুঃখের প্রতি। বক্তা এই ধারণাটি আরও বিস্তৃত করেন, ফ্লেমিশ রেনেসাঁস শিল্পী পিটার ব্র্যুগেল দ্য এল্ডারের The Census at Bethlehem চিত্রকর্মের উল্লেখ করে, এবং মন্তব্য করেন যে দুঃখ তখনও ঘটে যখন মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন করে। সত্যিই, বক্তা লক্ষ্য করেন যে কিছু মানুষ খাচ্ছে, কেউ একটি জানালা খুলছে, এবং অন্যান্যরা শুধু হাঁটছে—এমনকি গর্ভবতী মেরি ও যোসেফ জনগণনা নিবন্ধন করতে আসছেন। বক্তা বলেন, যদিও বয়স্করা খুশি হয়ে ক্রিস্টের জন্মের প্রতীক্ষা করছেন, কিন্তু সবসময় কিছু তরুণ মানুষ থাকবে যারা এমন ঘটনাটি বিশেষভাবে আশা করে না—যেমন ছবির শিশুদের, যারা খেলা করছে এবং একটি জলে পরিপূর্ণ পুকুরে বরফের উপর স্কেট করছে, যা একটি বনভূমির পাশে। বক্তা বলেন যে, শিল্পীরা জানতেন যে সহিংসতা কিছু গোপন, বিশৃঙ্খল জায়গায় চলতে থাকে, যতক্ষণ না জীবনের স্রোত অব্যাহত থাকে। এখানে বক্তা The Massacre of the Innocents চিত্রকর্মটির উল্লেখ করেন, যা প্রথম খ্রিস্টান শহীদদের হত্যার চিত্র তুলে ধরে। এই ছবিতে, প্রাণীরা উদাসীনভাবে তাদের কাজ করে চলেছে, কুকুরেরা তাদের কাজ করছে, এবং এক হত্যাকারীর ঘোড়া নির্দোষভাবে তার পেছনের অংশ গাছের গায়ে ঘষছে।
এই ঘটনাটির একটি নির্দিষ্ট উদাহরণ হিসেবে, বক্তা আবারও ব্র্যুগেল এর একটি চিত্রকর্ম, Landscape with the Fall of Icarus উল্লেখ করেন, এবং বলেন যে ছবির প্রতিটি কিছু যেন আইকারাসের সহিংস মৃত্যুকে উপেক্ষা করে। ছবির সামনে একজন কৃষক যিনি বলদ চালাচ্ছেন, বক্তা বলছেন, হয়তো সে আইকারাসকে পানিতে পড়তে এবং চিৎকার করতে শুনেছিল, তবে এই ঘটনা তার জন্য গুরুত্বহীন। ছবির সূর্যটি তার স্বাভাবিকভাবে ঝলমলে ভাবে উঠে যাচ্ছে। বক্তা তার প্রতিবিম্বকে লক্ষ্য করেন, যা আইকারাসের ফিকে পায়ে পড়ে থাকা পানির মধ্যে প্রতিফলিত হয়। কবিতার শেষে, বক্তা একটি আলিশান জাহাজ এর চিত্র তুলে ধরেন, যা অবশ্যই আইকারাসকে আকাশ থেকে পড়তে দেখেছিল, কিন্তু জাহাজটির একটা যাত্রা ছিল, তাই এটি স্মুথলি এগিয়ে গিয়েছিল।
1st Line:
About suffering they were never wrong,
যন্ত্রণার ব্যাপারে তারা কখনো ভুল ছিলেন না,
(সারাংশ) – "পুরানো মাস্টার" বা প্রাচীন শিল্পীরা মানুষের কষ্টের প্রকৃতি খুব ভালোভাবে বুঝতেন এবং তাদের কাজের মধ্যে এটি স্পষ্ট ছিল।
2nd Line:
The Old Masters: how well they understood
পুরানো মাস্টাররা: কীভাবে তারা খুব ভালোভাবে বুঝতেন
(সারাংশ) – প্রাচীন শিল্পীরা মানুষের যন্ত্রণা এবং কষ্টের গভীরতা বুঝতে সক্ষম ছিলেন। তাদের শিল্পের মাধ্যমে এ বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
3rd Line:
Its human position; how it takes place
এটি মানবিক অবস্থান; কীভাবে এটি ঘটে
(সারাংশ) – তারা জানতেন যে মানুষের কষ্ট কীভাবে আমাদের চারপাশে ঘটে, আর তা খুবই স্বাভাবিকভাবে হয়।
4th Line:
While someone else is eating or opening a window or just walking dully along
যখন অন্য কেউ খাচ্ছে বা জানালা খুলছে অথবা শুধু মন্থরভাবে হাঁটছে
(সারাংশ) – কষ্টের ঘটনা ঘটে যখন অন্যরা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যস্ত থাকে। এটি জীবনের অনুশীলনের মতো যা সবাই অনুভব করতে পারে না।
5th Line:
How, when the aged are reverently, passionately waiting
কীভাবে, যখন বৃদ্ধরা শ্রদ্ধা ও আবেগের সাথে অপেক্ষা করছেন
(সারাংশ) – এখানে বোঝানো হচ্ছে যে, জীবনের শেষ পর্যায়ে যখন বৃদ্ধরা গভীর আশা ও ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষা করেন।
6th Line:
For the miraculous birth, there always must be
অদ্বিতীয় জন্মের জন্য, সবসময় থাকতে হবে
(সারাংশ) – অদ্ভুত ও মহিমাময় কিছু ঘটার অপেক্ষায় থাকলেও, সেই মুহূর্তে অন্যান্য ঘটনাও চলতে থাকে।
7th Line:
Children who did not specially want it to happen, skating
এমন কিছু শিশু যারা বিশেষভাবে এটি ঘটতে চায়নি, হকির পিঠে স্কেটিং করছে
(সারাংশ) – এমন কিছু শিশু রয়েছে যারা জীবনের বড় পরিবর্তন বা ঘটনাকে মন দিয়ে চায় না, বরং তারা নিজেদের খেলায় বা জীবনে মগ্ন থাকে।
8th Line:
On a pond at the edge of the wood:
একটি পুকুরে যা বনের কিনারে অবস্থিত
(সারাংশ) – তারা শিশুদের মতো অজ্ঞতার মধ্যে, কোনো গম্ভীর ঘটনা বা ঘটনার বাইরে নিজেদের আনন্দের মধ্যে সময় কাটাচ্ছে।
9th Line:
They never forgot
তারা কখনো ভুলে যায়নি
(সারাংশ) – তারা (শিল্পীরা) জানতেন যে জীবনের সত্যিকার কষ্ট ও যন্ত্রণা অবশেষে তার পথ অনুসরণ করবে, যদিও মানুষ অনেক কিছুই উপেক্ষা করতে থাকে।
10th Line:
That even the dreadful martyrdom must run its course
এমনকি ভয়াবহ শহীদত্বও তার পথ অনুসরণ করতে হবে
(সারাংশ) – যন্ত্রণা বা শোকের কোনো ঘটনা, যেমন শহীদত্ব, যা শেষ পর্যন্ত অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করবে।
11th Line:
Anyhow in a corner, some untidy spot
যেমন একটা কোণে, কোনো এলোমেলো জায়গায়
(সারাংশ) – এই দুঃখ বা যন্ত্রণার ঘটনাটি কোথাও এক কোণে বা অবহেলিত স্থানে ঘটবে, যেখানে সবাই তার প্রতি মনোযোগ দেয় না।
12th Line:
Where the dogs go on with their doggy life and the torturer's horse
যেখানে কুকুরগুলো তাদের কুকুরের জীবন যাপন করে এবং নির্যাতককের ঘোড়া
(সারাংশ) – জীবন চলতে থাকে, যেমন কুকুরগুলো তাদের নিজস্ব জীবনে মগ্ন থাকে, এবং যন্ত্রণাদায়ক কাজগুলোও শান্তিপূর্ণভাবে চলে।
13th Line:
Scratches its innocent behind on a tree.
গাছের গায়ে তার নির্দোষ পিঠ ঘষছে।
(সারাংশ) – এখানে এটি বোঝানো হচ্ছে যে, বিশ্ব ও জীবন চলতে থাকে, এমনকি যেখানে কোনো শোক বা কষ্ট ঘটে, সেখানেও সবকিছু আগের মতো চলতে থাকে।
14th Line:
In Brueghel's Icarus, for instance: how everything turns away
ব্রুয়েগেলের ইকারাসে, উদাহরণস্বরূপ: কীভাবে সবকিছু বিপর্যয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে
(সারাংশ) – ব্রুয়েগেলের শিল্পকর্ম 'ইকারাস' এর মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, কিভাবে সবাই বিপর্যয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন তা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়।
15th Line:
Quite leisurely from the disaster; the ploughman may
বিপর্যয়ের থেকে খুব ধীরে ধীরে; চাষি হয়তো
(সারাংশ) – একটি দুর্ঘটনার প্রতি মানুষের উদাসীনতা বোঝানো হচ্ছে, যেখানে একজন চাষি হয়তো দুর্ঘটনার শব্দ শুনতে পারে কিন্তু তার কাজের প্রতি আগ্রহ থাকে।
16th Line:
Have heard the splash, the forsaken cry,
স্প্ল্যাশ, পরিত্যক্ত চিৎকার শুনতে পেরেছে,
(সারাংশ) – একটি দুর্ঘটনার প্রতিধ্বনি শুনলেও, সেটা তার জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বা উদ্বেগজনক নয়।
17th Line:
But for him it was not an important failure; the sun shone
কিন্তু তার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যর্থতা ছিল না; সূর্য জ্বলছিল
(সারাংশ) – সূর্য তার কাজ অব্যাহত রাখছে, এবং মানুষের ব্যর্থতা বা বিপর্যয়কে উপেক্ষা করা হচ্ছে।
18th Line:
As it had to on the white legs disappearing into the green
যেভাবে সূর্যকে সাদা পায়ে সবুজ জলে হারিয়ে যেতে দেওয়া ছিল
(সারাংশ) – পৃথিবী তার গতিপথ অব্যাহত রেখেছে, এবং দুর্ঘটনার ঘটনাটি নির্বিকারভাবে ঘটে গেছে।
19th Line:
Water; and the expensive delicate ship that must have seen
জল; এবং সেই মহামূল্যবান নরম জাহাজ যা নিশ্চয়ই দেখেছে
(সারাংশ) – এখানে একটি মূল্যবান জাহাজের কথা বলা হচ্ছে, যা হয়তো দুর্ঘটনা দেখেছিল কিন্তু সেইসব ছোট ঘটনা তার চলমান পথে কোনও প্রভাব ফেলেনি।
20th Line:
Something amazing, a boy falling out of the sky,
অবিশ্বাস্য কিছু, আকাশ থেকে পড়ে যাওয়া একটি ছেলে,
(সারাংশ) – দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এমনকি একটি ছেলে আকাশ থেকে পড়ে গেলেও, তা অন্যদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।
21st Line:
Had somewhere to get to and sailed calmly on.
তার কিছু স্থানে পৌঁছানোর ছিল এবং সে শান্তভাবে চলতে থাকে।
(সারাংশ) – অবশেষে, পৃথিবী ও মানুষ তাদের দুঃখ বা বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে শান্তভাবে চলতে থাকে।
এই কবিতাটি জীবন ও কষ্টের প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করে। কবি এইভাবেই বলেন যে, মানবযন্ত্রণা, শোক বা বিপর্যয় যদিও ঘটে, জীবন তার গতিতে চলে এবং মানুষ তাদের দৈনন্দিন কাজে বা অভ্যস্ততায় মগ্ন থাকে। ব্রুয়েগেলের "ইকারাস" ছবির উল্লেখ দিয়ে, কবি দেখান কিভাবে পৃথিবী ও মানুষ একে অপরের বিপদ বা কষ্ট উপেক্ষা করে চলে, যতক্ষণ না তা তাদের নিজস্ব দিক থেকে প্রভাব ফেলে।